শিরোনাম
শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি শেখ মুজিব দেশে ফ্যাসিবাদের জনক : মির্জা ফখরুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি

রাঙ্গামাটির সড়কের বাঁকে বাঁকে মুগ্ধতা : আসামবস্তি থেকে কাপ্তাই

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪
  • ২৮৫ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ে নির্মিত হয়েছে উঁচুনিচু পিচঢালা সর্পিল পথ। এর একপাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি, অন্যদিকে সারি সারি দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়। মাঝে মধ্যেই হ্রদের জলে দূরে ভেসে চলা নৌযানে আগন্তুকের বাঁধভাঙা উল্লাস। সেই সুরধ্বনিতে ভাঙে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা। হ্রদের নীল জলরাশিতে পড়া সূর্যের দ্যুতিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে চারপাশ। দিগন্তে মিলিয়ে যায় প্রভাকর। রোজকার মতো ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাঁঝে নীড়ে ফেরা পাখি দলের সারথি হন মনুষ্যকুলও। রাঙ্গামাটি আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বাঁকে বাঁকে এই পার্থিব মুগ্ধতা টানছে পর্যটকদের।

মূলত রাঙ্গামাটি শহরের সঙ্গে কাপ্তাইয়ে যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ হিসেবে নির্মাণ হয় ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি। কম সময় ও সহজ যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় সড়কটির লেকভিউ আর নির্মল প্রকৃতি টানছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে সেখানে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে রিসোর্ট-পর্যটন স্পট। যেখান থেকে প্রতিদিনই আয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা।

এই সড়ককে ঘিরে পাহাড়ি এই জনপদে এসেছে বিদ্যুৎ। গড়ে উঠেছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেড়েছে কৃষিবাণিজ্য। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিশেষ করে মৌসুমি ফল, ফসল, কলা, সবজি এমনকি লেকের টাটকা মাছ ভালো দামে যেমনি পর্যটকদের হাতে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে, তেমনি অনায়াসেই শহরেও পাঠাচ্ছেন চাষিরা।

তবে যোগাযোগকে ছাপিয়ে সড়কটির দুপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে দ্রুত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শহরের অদূরে, সহজ যোগাযোগ ও কম সময়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে তাই প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে সেখানে। রাঙ্গামাটির পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করা আসামবস্তি কাপ্তাই সড়ক এখন হালের ক্রেজ!

চট্টগ্রাম থেকে সস্ত্রীক বেড়াতে এসেছেন অনিক বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই কাজের চাপে থাকি। ক্লান্তি কমানোর জন্য ঘোরাঘুরিটা তাই বেশি প্রয়োজন। এজন্য রাঙ্গামাটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ জায়গা। কাপ্তাই লেক পুরোটাই রাঙ্গামাটি বেষ্টিত। এই অসাধারণ সৌন্দর্য কেবল আসামবস্তি সড়কেই পাওয়া যায়।’

ভ্রমণের জন্য স্বামীর পছন্দের জায়গার তারিফ করে কংকা বড়ুয়া বিনতা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি চমৎকার একটি জায়গা। পাহাড় নদী সব এক জায়গায়। খুবই ভালো লাগছে।’

পরিবার নিয়ে নেত্রকোনা থেকে আসা রফিকুল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘গান শুনতাম রাঙ্গামাটির পাহাড়ে দুপুর বেলা আহারে…। আসলে গানের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক মিল। ভয়ানক সৌন্দর্য। চমৎকার লাগছে। আসলে এবারের ভ্রমণটা শতভাগ সফল হলো এখানে এসে।’

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাহেদ রাঙ্গামাটিতে এসেছেন প্রথম বার। তার কাছে পাহাড়, হ্রদ আর প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কেবলই মুগ্ধতার। বলেন, পাহাড়, হ্রদ আর সবুজ প্রকৃতি একসঙ্গে চোখে পড়ে কেবল রাঙ্গামাটিতেই। এখানাকার ‘আই লাভ রাঙামাটি’ খচিত সেলফি পয়েন্টে তোলা ছবি সযত্নে রাখার মতো।

ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ বাড়ায় দ্রুত বিকাশ ঘটছে পর্যটন শিল্পেরও। এখন বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হওয়া ১০টি রিসোর্ট ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকরা প্রতিদিনই আয় করছেন কয়েক লাখ টাকা। সড়কটির অন্যতম জনপ্রিয় বড়গাঙ রিসোর্টের মালিক প্রিয়দর্শী চাকমা বলেন, ‘আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটি নির্মাণের পর বাণিজ্যিকভাবে অনেক রিসোর্ট ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। শুক্র ও শনিবার বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় থাকে। তখন ব্যবসা ভালো হয়।’

পর্যটনের হাত ধরে স্থানীয় অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে সড়কটি। পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে স্থানীয় বাসিন্দা অরুন জ্যোতি চাকমা ইজর রিসোর্টের পাশেই দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘সড়কটি হওয়ায় এখানে প্রচুর পর্যটক বেড়েছে। এতে দোকানের বেচাবিক্রিও অনেক ভালো হচ্ছে। আমরা লাভবান হচ্ছি।’

৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহুমাত্রিক এ সড়ক প্রকল্পটি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার অর্জন করেছে। পিছিয়ে থাকা পার্বত্য অঞ্চলকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে এগিয়ে নিতে একটি কার্যকর সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার দাবি পাহাড়ের মানুষের। এতে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি বলেন, ‘আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটি এলজিইডির জন্য বড় অর্জন। রাঙামাটি শহরে যেকোনো পর্যটক নামলেই এখানে বিল্ডিং আর স্থাপনা। এ কারণে প্রকৃতি দেখা হয় না। সেক্ষেত্রে এ সড়কটিতে গেলে রাঙামাটির যে আসল রূপ, পাহাড় এবং লেকের সম্মিলিত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।’ খবরের কাগজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions