ডেস্ক রির্পোট:- দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৫০ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ অর্থ জমা আছে, তার অর্ধেকের মালিক ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮ জন অ্যাকাউন্টধারী। সে হিসাবে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় অর্ধেকের মালিকই কোটিপতিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যাদের আয়ের সুযোগ কম তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কম আয়ের মানুষ জমানোর বদলে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানত অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখের মতো। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা অর্থের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮ জনের হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি অর্থ আছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ৯০৮টি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৮৬টি। তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৩ হাজার ৩২২টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১ থেকে ৫ কোটি টাকা আছে, এমন আমানতের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৯২ হাজার ৫১৬টি। ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৫২টি। ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৫টি। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ হাজার ৮১২টি। এই ১ হাজার ৮১২ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের মোট আমানতের সাড়ে ১৪ শতাংশের মতো। বিপরীতে ৫ হাজার টাকার কম আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১১ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৬টি। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৫১ লাখ ৫ হাজার ৭৩১টি। তিন মাস আগেও এই অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৫১ লাখের মতো। ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা আছে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৫টি হিসাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, যাদের আয়ের সুযোগ কম তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের আয় অনেক কমে যাচ্ছে। যেহেতু মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, যে সঞ্চয় ছিল, সে সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন খরচ চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যা হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল পাঁচজন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা করোনা মহামারির পর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।বাংলাদেশ প্রতিদিন