খাগড়াছড়ি:- দিনে দিনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে পাহাড়ের কৃষি খাত। উঁচু-নিচু পাহাড়ি ভূমিতে ফল-ফসলের বহু সাফল্যগাথা রয়েছে এখানে। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তেমনই একজন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা আবু সাঈদ। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। নিজের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন অনেকের কর্মসংস্থান।
আবু সাঈদের বাড়ি ঢাকায়। ২০২২ সালে খাগড়াছড়িতে এক বন্ধুর ফল বাগানে ঘুরতে এসে তামাক চাষ দেখে বিচলিত হন। আর তখনই সম্ভাবনাময় জমিতে তামাকের পরিবর্তে কৃষি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন। পরবর্তী সময়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুরের সীমান্তঘেঁষা মেস্ত্রীর চর এলাকায় ১২ একর টিলা জমি বর্গা নেন আবু সাঈদ। প্রাথমিকভাবে চার একর জমিতে শুরু করেন স্মার্ট-১২১৭ জাতের হাইব্রিড টমেটো চাষ। গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে রোপণ করেন টমেটোর চারা। এখন সেই টমেটো খেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ আর হলুদ রঙের টমেটো। শ্রমিকদের সঙ্গে গাছের পরিচর্যার পাশাপাশি পাকা টমেটো তুলছেন কৃষক আবু সাঈদ।
স্মার্ট-১২১৭ জাতের হাইব্রিড গাছ থেকে বীজ বপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই টমেটো সংগ্রহ শুরু করা যায়। টমেটোর ভারে নুইয়ে পড়ে গাছ। তাই প্রতিটি গাছকে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে দিতে হয়। আগাম ও মৌসুমি চাষ উপযোগী ভাইরাস সহনশীল এই জাতের গাছ থেকে গড়ে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। একর প্রতি গড় ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ টন। আবু সাঈদ জানান, তার টমেটো খেতে পরিচর্যার কাজে মাসিক বেতনে স্থায়ীভাবে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া মৌসুমে আরও বাড়তি ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
চার একর পাহাড়ের ঢালু জমিতে চাষ করা গাছ থেকে এবার এক থেকে দেড় শ টন টমেটো বিক্রি করার আশা করছেন কৃষি উদ্যোক্তা আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ‘চলমান বাজার দর হিসেবে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব বলে আশা রাখি, যা উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।’
পাহাড়ে সম্ভাবনাময় বহু কৃষি জমি রয়েছে জানিয়ে আবু সাঈদ আরও বলেন, ‘দেশের অন্যান্য স্থানে বর্ষা মৌসুমে জমি তলিয়ে যায় বিধায় ফসলের ক্ষতি হয়। পাহাড়ের ওপর পানি জমে না, তাই এখানে যেকোনো ধরনের ফল-ফসল উৎপাদন সম্ভব।’
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, ‘সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালুতে টমেটো চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যার অনন্য দৃষ্টান্ত কৃষক আবু সাঈদ। সঠিক পরামর্শ পেলে এবং পরিশ্রম করলে এ অঞ্চলের কৃষকরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে।’