ডেস্ক রির্পোট:- সরকার, নাগরিক সমাজ এবং শ্রম খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে রোববার সন্ধ্যা অবধি সেই আলোচনা হবে। বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর ঢাকা-ওয়াশিংটন এটাই হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা। কূটনৈতিক সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার এডমিরাল আইলিন লাউবেচার, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার এবং দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এখন ঢাকার পথে। তারা আলাদা আলাদা ফ্লাইটে আজ বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
কূটনীতিক সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালকের নেতৃত্বাধীন দেশটির প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলটি এমন এক সময় ঢাকা আসছে, যখন প্রতিবেশী মিয়ানমারের সংঘাতের ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর এসে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এক সেমিনারে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। ফলে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুর পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি যে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য থাকলেও দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
খসড়া সূচি অনুযায়ী, দলনেতা আইলিন লাউবেচার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রোববার দুপুরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। একই দিন বিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের অন্য দুই সদস্য আফরিন আক্তার ও মাইকেল শিফার শনিবার ঢাকায় পৌঁছার পরপরই শ্রমিকনেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠকের সূচি রয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ৫২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ওয়াশিংটনের তরফে গত অক্টোবরে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছিল নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্তরে দুই দেশের মধ্যে সফর বিনিময় শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরটি হচ্ছে। উল্লেখ্য, নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মূল্যায়নসহ নিয়মিত বিবৃতি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। অতীতে যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে অবজারভেশন যেমন দিয়েছে, তেমনি সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কথাও বলেছে। ওয়াশিংটনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর ‘নির্বাচন পরবর্তী বোঝাপড়া’ আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন ঢাকার পেশাদাররা।
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের পর দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশেরও আগ্রহ রয়েছে। জো বাইডেনের চিঠি এবং ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর ওয়াশিংটনের নানা মহলে বাংলাদেশের যোগাযোগের ফল। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের ফরেন পলিসিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বরাবরই অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে নির্বাচনের বেশ আগে থেকে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকার, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়গুলোও থাকবে।মানবজমিন