আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- গাজার দক্ষিণের রাফায় বোমাবর্ষণ বৃদ্ধি করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলায় সেখানে এক পরিবারেরই ১২ জনের বেশি সদস্য মারা গেছেন। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির মোট মৃত্যুসংখ্যাও লাফিয়ে বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯ হাজার ৩১৩ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১১৮ জন।
জেরুজালেমে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ বলেছেন, জিম্মি মুক্তি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের অগ্রগতি চোখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতারের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এলো এ সিদ্ধান্ত।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, খান ইউনিসে অভিযান আরও জোরেশোরে শুরু করেছে তারা। শহরটির অবস্থান রাফা থেকে উত্তরে। তবে রাফার ওপর চালানো হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধেও সাড়া দেয়নি।
আনুমানিক প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এখন রাফায় আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো গাজা থেকেই মানুষ বিভিন্ন সময়ে সেখানে গিয়ে হাজির হয়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এক সময় ওই এলাকাটিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু এখন ইসরায়েল বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলে ওই এলাকায় হামলা চালাতে হবে। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে ওই শহরে বসবাসরত বেসামরিক মানুষদের সুরক্ষা নিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও তাদের নেতারা উদ্বেগ জানিয়েছেন এ নিয়ে। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বেসামরিকদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা হাতে না রেখে অভিযান চালানো উচিত হবে না ইসরায়েলের। এসবের প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেসামরিকদের সরিয়ে নিয়ে তারপর হামলা চালাবে তারা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। রাফায় অবস্থানরতরাও বলছেন, তাদের যাওয়ার মতো আর কোনো জায়গা নেই। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণে গোটা গাজাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য ও কর্মকর্তারা বলছেন, মিসর থেকে গাজায় যে সহায়তা প্রবেশ করছিল, সেটিও গত দুই সপ্তাহে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সুরক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণে যেটুকু সহায়তা ঢুকতে পারছে, সেগুলোও বিতরণে সমস্যা হচ্ছে।
টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে রাফার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওই বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে ও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি নৌকাগুলো থেকে গুলি চালানো হয়েছে।
রয়টার্সের ভিডিও সাংবাদিকের পাঠানো ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফার আল-নুর পরিবারের বাড়ি ইসরায়েলি হামলার কবলে পড়েছে। বাড়িটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পরে রাফার হাসপাতালের ওই পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহও দেখা গেছে।
এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, খান ইউনিস থেকে আল-মাওয়াসির দিকে প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ওই স্থানটিকেও এতদিন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে ধরা হতো।
শুধু মৃত্যু নয়, হতাহতও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট আহত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৩৩৩ জন। সূত্র : রয়টার্স