আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- গাজায় আরও ছয় থেকে আট সপ্তাহ পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান চালাতে পারে ইসরায়েল। বিশ্বের বহু দেশের আপত্তি সত্ত্বেও বর্তমানে রাফায় স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দেশটির সমর কৌশলের সঙ্গে জড়িত চার সূত্র জানিয়েছে এ খবর।
সূত্র জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধানরা মনে করছেন তারা এই সময়ের মধ্যে হামাসের উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করতে পারবেন। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে মানবিক উদ্বেগ। রাফায় এ মুহূর্তে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা আগে থেকেই মানবিক সংকটের মুখে রয়েছেন। এর মধ্যে অভিযান শুরু হলে আরও প্রতিকূলতার মুখে পড়বেন তারা।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের আন্তর্জাতিক সমালোচনায় কান না দেওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছেন সাবেক ইসরায়েলি গোয়েন্দা প্রধান আভি মেলামেদ। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মেলামেদ বলেন, রাফা হামাসের নিয়ন্ত্রণে থেকে শেষ ঘাঁটি এবং সেখানে তাদের ব্যাটালিয়ন রয়েছে, যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে অবশ্যই এটির অবসান ঘটাতে হবে ইসরায়েলকে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট গত শুক্রবার বলেন, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) হামাসের যোদ্ধা, কমান্ড সেন্টার ও সুড়ঙ্গ লক্ষ করে রাফায় অভিযান শুরু করতে চাইছে।’ এ অভিযান কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, সে সংক্রান্ত কোনো সময়সীমা দেননি তিনি। তবে গ্যালান্ট বলেছেন, বেসামরিকদের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, গাজায় ২৪টি আঞ্চলিক ব্যাটালিয়ন ছিল, আমরা তার মধ্যে ১৮টিকে পরাস্ত করেছি। এখন রাফা হামাসের পরবর্তী কেন্দ্র।’
এদিকে ইসরায়েলের এসব বক্তব্য ও বর্তমান সামরিক অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বিশ্বনেতারা। গত সপ্তাহে উচ্চ মাত্রার কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি নেতানিয়াহুকে নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনা ছাড়া সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে সতর্ক করেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, বেসামরিকদের আক্রমণ শুরুর আগে ওই স্থান থেকে বের হতে দেওয়া হবে। তবে আইডিএফ কীভাবে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে সরিয়ে নেবে, তা জানায়নি।
ইসরায়েলি এক নিরাপত্তা সূত্র ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তরে পাঠানোর আগে গাজাবাসীরা হামাস যোদ্ধা কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। পৃথক ইসরায়েলি সূত্র জানায়, রাফার উত্তরে জেটি তৈরি করা হতে পারে, যাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও হাসপাতালের রসদ সমুদ্র পথে আসতে পারে।
এমনও শোনা যাচ্ছে যে, ফিলিস্তিনিদের উত্তরের দিকে যেতে দেওয়া হবে না। রাফার আশপাশেই তাঁবুতে রাখা হবে। ইসরায়েলি এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে এসেছে এ তথ্য। আঞ্চলিক কর্মকর্তারাও বলছেন, এত মানুষকে উত্তরের অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া নিরাপদ হবে না। কারণ সেখানে এখন কোনো বিদ্যুৎ ও পানি নেই। ওই অঞ্চলে পড়ে থাকা বিস্ফোরক ঝুঁকিমুক্ত কি না, তাও অস্পষ্ট। সূত্র: রয়টার্স