ডেস্ক রির্পোট:- পূর্ব ঘটনার জের ধরে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুইটি পক্ষ। এ সময় উভয় পক্ষের কর্মীদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, মুহুর্মুহু ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও চকলেট বোমা ফোটানোর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বাড়ির সামনে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ। পরবর্তীতে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষে জড়ানো গ্রুপ দুইটি হলো সিক্সটি নাইন ও উপগ্রুপ সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার)। এদের মধ্যে সিক্সটি নাইন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ও সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
সরেজমিন দেখা যায়, বিকাল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হল এলাকায় সিক্সটি নাইন ও শাহ আমানত হল এলাকায় সিএফসির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। এরপর সাড়ে চারটায় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা শাহজালাল ও সিএফসির নেতারা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল এবং কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করে। এ সময় দুই গ্রুপের অনুসারীদের নেতাকর্মীদেরকেই দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। এছাড়াও নেতাকর্মীরা আবাসিক হলের কক্ষ ও শৌচাগারের দরজা, চৌকি-খাট রাস্তায় এনে প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করে। এ বলয়কে আশ্রয় করে একে অপরের দিকে ইট পাটকেল ও কাঁচের বোতল ছুঁড়েছেন সংঘর্ষে জড়িতরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘ চেষ্টার পরেও নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।
এরপর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে কিছুক্ষণের জন্য থামে সংঘর্ষ। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শহীদ আব্দুর রব হলে অবস্থানরত সিএফসির কর্মীরা যোগ দিলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। পরবর্তীতে রাত আটটার দিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় প্রশাসন। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছে। গুরুতর আহত চার জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ-সিক্সটিনাইন ও সিএফসি। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ নেতাকর্মী আহত হন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিক্সটি নাইন ও বিজয় উপপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের বিষয়ে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাইদ বলেন, গতকাল স্টেশনে একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একটা ছেলের সঙ্গে ওদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একজনের বাকবিতণ্ডা হয়। সেই থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। গতকাল রাতেই সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের ছেলেরা হলের ভেতরে ঢুকে যায়। কিন্তু সিএফসি আমাদের ছেলেদের বারবার বিভিন্নভাবে উসকানি দিচ্ছে এবং রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে ঢিল মারে। পরে আমার ছোট ভাইয়েরা ওদের এ ধরনের কাজ প্রতিহত করেছে। আজকের ঘটনায় আমাদের চার জন ছেলে আহত হওয়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় তুচ্ছ বিষয়গুলো অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি আমাদের অভিভাবক সাদ্দাম-ইনান ভাই কমিটি দিয়ে দেন তাহলে গ্রুপ- উপ গ্রুপ থাকলেও জবাবদিহির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু জবাবদিহির জায়গাটা না থাকার জন্য তুচ্ছ বিষয়গুলো বড় হয়ে যাচ্ছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে সিএফসি পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, সিক্সটি নাইনে কোনও নেতা নেই। তাদের কেউ কাউকে মানে না। আজ আমাদের কর্মীরা জুমার নামাজ পড়ে ফেরার সময় সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে চবি প্রক্টর ড. নুরুল আজিম শিকদার বলেন, আমরা সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে উভয়পক্ষকে হলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর পরপরেই অপর একটি অংশ এসে যোগ দিলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর রাত আটটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল বডির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হই। শুরু থেকেই আমাদের চেষ্টার কোনও কমতি ছিল না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতটাই অসহনশীল যে তারা আমাদের কোনও কথাই শুনতে চায় না। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।