বান্দরবান:- বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের বেশির ভাগ সীমান্ত এলাকায় দেশটির ভেতরে গোলাগুলি কমেছে। তবে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রয়েছে সতর্ক। সীমান্তে পাতা নড়লেও যেন ওপার থেকে গুলি ছুটে আসছে।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ও তোতার দ্বীপ এলাকায় সীমান্তের ওপারে গতকাল সোমবার তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এই অবস্থায় স্থানীয়দের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি ভালো না। গুলি-গোলা দুটোই ছুটে আসছে এপারে। প্রাণহানিও ঘটেছে। সর্বশেষ তিনটি রকেট লঞ্চারের গোলা উদ্ধার করা হয়েছে। এই অবস্থায় বিজিবির নির্দেশনায় সোমবার তমব্রু, ভাজাবুনিয়া হেড়ম্যানপাড়া, তমব্রু পশ্চিমকুল, তেঁতুলতলা, জলপাইতলী, বেতবুনিয়া, মন্ডলটাড়া, পশ্চিমপাড়া ও নয়াপাড়ায় মাইকিং করা হয়েছে।
মাইকিংয়ে স্থানীয়দের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে তোতার দ্বীপে তীব্র গোলাগুলি হয়েছে। স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র বলেছে, টেকনাফেও জেলেদের নাফ নদীতে মাছ ধরতে না যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইক্যং উত্তরপাড়ার বাসিন্দা হাজি ফেরদাউস বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের এক থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের ভেতরেও কয়েকটি গোলা এসে পড়েছে। আরাকান আর্মি সীমান্ত এলাকায় কোনো নড়াচড়া দেখলেই গুলি করছে। এমনকি ঝোপঝাড়ের পাতা নড়লেও তারা গুলি করে।
শামসুদ্দিন নামে টেকনাফের উনচিপ্রাং এলাকার এক জেলে বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরা তো দূরের কথা, ঘরে থাকাই দায় হয়ে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে ধারদেনা করে চলছি।’
ঘুমধুমের এসএসসি কেন্দ্র স্থানান্তর
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্য জায়গায় সরানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। গতকাল দুপুরে তিনি ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রটি পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেন। তিনি জানান, উত্তর ঘুমধুমের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। নতুন ঘোষিত পরীক্ষা কেন্দ্র দুটি হলো ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমানও গতকাল দুপুরে কেন্দ্র স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠাতে আলোচনা চলছে
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে ফেরত পাঠাতে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে।
একটি সূত্র বলেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের জিনিসপত্রের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের জিনিসপত্রের মধ্যে অস্ত্র, গোলাবারুদও রয়েছে। তালিকা শেষ হলে যেকোনো সময় তাঁদের নৌপথে মিয়ানমারে পাঠানো হবে। মিয়ানমারের একটি জাহাজকে বাংলাদেশের নৌসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরী আলম মিনার বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ গুজব। কেউ প্রবেশ করেনি। কোনো সন্ত্রাসী ক্যাম্পে প্রবেশ করলে তাদের আমরা ধরব।’
এদিকে বিজিবির হাতে অস্ত্রসহ আটক ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে থাকা মো. সাদেক নামের এক আসামি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিচারক তাঁর রিমান্ডের অনুমতি দেননি বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ওই ২৩ জনের সবাই রোহিঙ্গা। তাঁরা উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে তাঁদের মিয়ানমারে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কী কারণে, কেন তাঁরা মিয়ানমারে গেলেন এবং অস্ত্র কোথায় পেলেন, এসব বিষয় জানতে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।আজকের পত্রিকা