শিরোনাম

পিএমএল-এন ও পিপিপি মতৈক্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বিলাওয়াল!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৩০ দেখা হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তিন দিন পর অবশেষে ভোট গণনা শেষ হয়েছে। পার্লামেন্টে ২৬৬টি আসনের মধ্যে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ২৬৪টি আসনে। দুটি আসনের ফলাফল অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। কারণ এর মধ্যে একটি আসনের প্রার্থী গুলিতে নিহত হওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে এবং আরেকটি আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হবে এই মাসের শেষের দিকে। সেই হিসাবে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ন্যূনতম ১৩৩টি আসনের প্রয়োজন।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন জিতেছে। এরমধ্যে ৯৩ জনই ইমরান খান ও তার দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী। নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসন পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছে ৫৪টি আসন। এছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট -এমকিউএম ১৭টি, জামিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) তিনটি। এবং বাকি আসন বিভিন্ন ছোট দল জিতেছে।

চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৩টি আসন কোনো দলই পায়নি। ফলে জোট সরকার গঠনের আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এটি নিয়েই দেখা দিয়েছে জটিলতা। গণমাধ্যমগুলোতে ১৭ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম-পি) সঙ্গে নওয়াজের দলের প্রাথমিক ঐক্যমতের খবর প্রচার করেছিল খোদ পিএমএল-এন। কিন্তু এমকিউএম-পির আহ্বায়ক খালিদ মকবুল বলেছেন, সরকার গঠন ইস্যুতে পিএমএল-এনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি তার দলের। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এমকিউএম-পি সরকারে যাবে কিনা তা পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

যদি জোট সরকার গঠনে এমকিউএম-পি দলকে নওয়াজের দল রাজিও করায়- এরপরেও সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনের সঙ্গে বিস্তর তাদের ফারাক রয়েছে। তাদেরকে পিপিপির দিকেই চেয়ে থাকতে হবে। সংবাদমাধ্যম ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোট সরকারের প্রশ্নে নওয়াজের কাছে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদ চেয়েছে পিপিপি। দলের নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী করলে নওয়াজের মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে সম্মত পিপিপি। পিএমএল-এনের চেয়ারম্যান শাহবাজ শরিফ গতকাল এ কথা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আজ সোমবার সরকার গঠন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডেকেছে পিপিপি। জোট সরকার গঠিত হলে তারা প্রায় পিএমএল-এনের মতোই প্রভাব দাবি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখনও কোন দিকে যায় সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বিলাওয়ালকে পদ ছেড়ে দিতে রাজি হবেন কি না সেটা দেখার বিষয়। এ অবস্থায় দর কষাকষি করতে আরও সময় লাগতে পারে।

ফলে সরকার গঠন ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনো ফায়সালা এখনও হয়নি বলা যায়। যদিও পিএমএল-এনের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব দাবি করেছেন, দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে তাদের। তবে এমকিউএম-পির সঙ্গে তাদের বক্তব্য না মেলায় প্রকৃতঅর্থে কী হচ্ছে তা এখনই বলা মুশকিল।

এখন পিএমএল-এন যদি পিপিপির সমর্থন পায় এবং এমকিউএম-পি যদি নিজেদের জোট সরকারে যোগদান থেকে বিরত রাখে- তাহলেও পিএমএল-এন সরকার গঠন করতে পারবে না। এর জন্য অন্ততপক্ষে ছোট কোনো দল বা ২ জনের বেশি স্বতন্ত্রের সমর্থন লাগবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পিএমএল-এনের জন্য এটিও কঠিন হয়ে যেতে পারে। কারণ সরকার গঠনের বিবেচনায় না থাকলেও রাজনীতির ময়দানে ইমরান এখনও বড় শক্তি।

তবে ইমরানের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কার্যত সরকার গঠন সম্ভব নয়। তবে ইমরান খানের বোন আলিমা খান নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেন, তার ভাই কারাগারে থেকেও পাকিস্তানের বর্তমান বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একই অভিযোগ এনে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইমরানের দল পিটিআই। শনিবার বেলুচিস্তান প্রদেশের বেশ কয়েকটি মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভও করেছে দলটির সমর্থকরা। লাহোরে বেশ কয়েকজন পিটিআই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারচুপির অভিযোগ আসায় ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ৫২টি ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া তিনটি আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল জামায়াত উলেমা-ই-ইসলামও (জেইউআই-এফ) নির্বাচনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। কারচুপির অভিযোগ এনে দলটির সমর্থকরা রবিবার করাচির রাস্তায়ও নেমেছে। জেইউআই-এফের মুখপাত্র সামি সোয়াতি সংবাদ পত্রিকা ডনকে জানিয়েছেন, তাদের সমর্থকরা শহরের একটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বিকল্প কী?

পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সেটা এককভাবে সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। কোন দলই এককভাবে সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এক্ষেত্রে দলগুলোর জোট করা ছাড়া সরকার গঠনের আর কোন বিকল্প নেই।

পাকিস্তানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদে থাকতে পারেন। আবার তাদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের ক্ষেত্রে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ কাকারের মতে, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়েকটি কারণে রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে থাকেন। প্রথমত, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে, দ্বিতীয়ত নিজেকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং সবশেষে পার্লামেন্টে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। তবে বিজয়ী হওয়ার পর এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাতে তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে যে সময়ের মধ্যে তাদের কোন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেবল সেই দলে যোগ দিতে পারবেন যাদের নির্বাচনী প্রতীক ব্যালটে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে অযোগ্য ঘোষণা করায় কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী এই দলে যোগ দিতে পারবেন না। তাই পিটিআইকে সমর্থন দেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোন দলে যোগদান করবেন তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিস্ময়কর সাফল্যের ফলে, তারা দুটি প্রধান বিরোধী দল অর্থাৎ নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি থেকে যোগদানের প্রস্তাব পাচ্ছেন। ওই দুই বিরোধী নেতারাও বলেছেন যে তাদের দলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করতে কোনও সমস্যা নেই।

সূত্র: বিবিসি, ডন, ট্রিবিউন, হিন্দুস্তান টাইমস

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions