চট্টগ্রাম:- কক্সবাজার থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে আসা একটি মিনিবাস চট্টগ্রাম নগরীর শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজার ওপর তল্লাশি করে নুরু ছালাম (৩৮) নামের এক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিন হাজার ৯০০ পিস ইয়াবা। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোতোয়ালি সার্কেলের উপপরিদর্শক মো. ফাহিম রাজু বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
গ্রেফতার নুর ছালাম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক। থাকতেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তার মতো কক্সবাজার থেকে মাদক নিয়ে আসার সময় গত সাত বছরে গ্রেফতার হয়েছেন ৭০৬ জন রোহিঙ্গা। তাদের বেশিরভাগই কারাগারে আছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, মাদকবহনে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত সাত বছরে (২০১৭-২০২৩ সাল পর্যন্ত) ৬৪০ মামলায় ৭০৬ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। তাদের কাছ থেকে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ২১২ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এক কেজি ৪০০ গ্রাম মাদকদ্রব্য, এক কেজি আইস, একটি অস্ত্র, আট রাউন্ড গুলি, ৮০ লিটার চোলাই মদ, এক লাখ ৯০ হাজার টাকা, তিনটি সোনারবার এবং দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অধীন চট্টগ্রাম মেট্রো (উত্তর-দক্ষিণ) কার্যালয়, জেলা কার্যালয়, টেকনাফ বিশেষ জোন এবং বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের অভিযানে এসব মাদকসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ১৪৭ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৭ পিস ইয়াবা এবং ২০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ১৩০টি মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালে ২০৯ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আট লাখ ৪৭ হাজার ৪১০ পিস ইয়াবা, এক কেজি আইস, ৬০ লিটার চোলাই মদ, তিনটি সোনারবার ও এক লাখ ৯০ হাজার উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ১৭৬টি মামলা করা হয়। ওসব মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালে ১৮৭ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছয় লাখ ২৮ হাজার ৮১৫ পিস ইয়াবা, সন্দেহজনক মাদক এক কেজি ৪০০ গ্রাম, অস্ত্র একটি, গুলি আট রাউন্ড এবং দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭৮টি।
এছাড়া ২০২০ সালে ৯৩ জন রোহিঙ্গাকে দুই লাখ দুই হাজার ২৬৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয় ৯১টি। ওসব মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২০১৯ সালে ২৬ জন রোহিঙ্গাকে ৪১ হাজার ৬৩৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ২৬টি। ২০১৮ সালে ৩১ জন রোহিঙ্গাকে ৭০ হাজার ১৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় ২৯ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালে ১৩ জন রোহিঙ্গাকে ২৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বসবাস করছেন। স্থানীয় একটি মাদক কারবারি চক্রের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদক পাচারে জড়িত আছে। বিষয়টি দেশের জন্য উদ্বেগজনক। এটি মাদক প্রতিরোধ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে। যা এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদকে জড়িয়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদকে জড়িয়ে যাওয়ায় এবং সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে দেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। প্রায় সময় অভিযানে মাদকসহ গ্রেফতার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। নিত্যনতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করছেন। এখনই তাদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। না হয় সারাদেশে বড় ধরনের একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।’বাংলা ট্রিবিউন