ডেস্ক রির্পোট:- ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) এক প্রকার কোণঠাসা করে আয়োজিত নির্বাচনে দেশটির অন্য প্রধান দুটি দল অংশ নিয়েছে। তবে কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।
পাকিস্তানের স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৮টা থেকে সাধারণ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়, শেষ হয় বিকাল ৫টায়। এদিন সশস্ত্র হামলায় নয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এর আগে বুধবার সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার দুটি ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাকিস্তান বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক মেরুকরণে আটকে রয়েছে। এ নির্বাচনের ওপর দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবারের নির্বাচন ঘিরে পাকিস্তানজুড়ে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্ত।
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রায় দুই বছর পর এ নির্বাচন হলো। গত বছর থেকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে আছেন ইমরান খান। কারাবন্দি এ নেতা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। এছাড়া তার দলের প্রতীকও কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রধান দুটি দল। ইমরানবিহীন এ ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
ভোট শুরু হওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল কল ও ডাটা পরিষেবা উভয়ই স্থগিত করা হয়। এ কারণে বিপত্তিতে পড়েন বলে জানান ভোটাররা। এ পদক্ষেপকে কাপুরুষোচিত বলে সমালোচনা করেছে পিটিআই। দলটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত ওয়াই-ফাই অ্যাকাউন্ট থেকে পাসওয়ার্ড মুছে ফেলার আহ্বান জানায় যাতে আশপাশে থাকা মানুষ ইন্টারনেট অ্যাকসেস করতে না পারে। পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সমালোচনা করেন।
এ পদক্ষেপকে সমর্থন করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদের ঘটনার ফলে মূল্যবান প্রাণহানি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরিহার্য।
এদিকে নির্বাচনী দৌড়ে অনেক বিশ্লেষক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল মুসলিম লীগকে এগিয়ে রেখেছেন। গতকালের ভোটে তিনি প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে ভোট দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো জোট সরকারের কথা বলবেন না। একটি সরকারের জন্য স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।’
ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৭৬ বছরের সিংহভাগ সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী। সর্বশেষ নির্বাচিত সরকারের পতন ও নির্বাচনে ইমরান খানকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ায় এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। তবে এ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা।