শিরোনাম
রাঙ্গামাটির চম্পকনগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতিদের পাশে জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন সীমানা জটিলতা ৬২ আসনে,এসব আসনের পরিবর্তন এসেছিল ২০০৮ সালে, নির্বাচনের আগেই সমাধান চেয়ে অর্ধশত আবেদন পটিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাচন স্থগিত রাঙ্গামাটির সাজেকে পর্যটকদের ঢল, খালি নেই কোনও রিসোর্ট খাগড়াছড়িতে জিপ উল্টে নিহত ১ সাড়ে ১২ বছরের কম বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ২১১১, বাদ যাচ্ছে নাম হদিস নেই ১৬৩টি অস্ত্র ও ১৮ হাজারের বেশি গুলির,লুণ্ঠিত অস্ত্রের বেশীর ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে জেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা ছয় দিন ও উপজেলা পর্যায়ে এক দিন : ডিসি র‌্যাব বিলুপ্তিসহ পুলিশ সংস্কারে বিএনপির ৫ সুপারিশ মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা ১৭ জানুয়ারি, আবেদন শুরু মঙ্গলবার

পাহাড়বিধ্বংসী ইটভাটা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৮৬ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- দেশের এক-দশমাংশ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড় এখন লোভের আগুনে পুড়ছে। উজাড় হচ্ছে আরণ্যক প্রকৃতি। বিবর্ণ ধূসর হচ্ছে পরিবেশ। অনেকটাই হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

দ্রুত অর্থ লাভের অসুস্থ দৌড়ে পরিবেশবিধ্বংসী প্রতিযোগিতায় অনেক স্থানেই আস্ত পাহাড় কেটে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা। এসব ভাটায় ইট তৈরির কাঁচামাল মাটির জোগান দিতে দেদার কাটা হচ্ছে পাহাড়। আর বনাঞ্চলের কচি গাছ কেটে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে এই ইট। ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি। এসব ইটভাটা স্থাপনে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও মানা হচ্ছে না। নেই পরিবেশ ছাড়পত্রও।

পার্বত্য তিন জেলার পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ১২৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে বান্দরবান জেলায় ৫৯, খাগড়াছড়িতে ৪০ ও রাঙ্গামাটিতে রয়েছে ২৫টি ইটভাটা। বছরের পর বছর ধরে এসব ইটভাটায় কোটি কোটি ইট যেমনি পোড়ানো হচ্ছে, তেমনি বছর বছর বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যাও। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে চিঠি।

শীত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল বর্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত একটানা চলে ইট উৎপাদন। মাটির জোগান দিতে কাটা হচ্ছে পাহাড়-কৃষিজমি। জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে মিলেছে এর সত্যতা। ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অনেককেই গুনতে হচ্ছে অর্থদণ্ড। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অনেক ইটভাটার কার্যক্রম।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর প্রণীত ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’-এ আইন লঙ্ঘনে এক বছর থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনের ১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত ধারায় জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত করলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা কাটার দায়ে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর দায়ে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

চলতি মৌসুমে গত দুই মাসে তিন জেলায় ৩১টি ইটভাটায় পাহাড় কাটা ও জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর অপরাধে ১৭ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রামমাণ আদালত। এদের মধ্যে রাঙ্গামাটির চার উপজেলায় ৯টি ইটভাটাকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি কাউখালীর দুই ইটভাটাকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং নতুন কাঁচা ইট সম্পূর্ণ ধ্বংস করে নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে ইটভাটার আগুন।

একই দিন বাঘাইছড়িতে তিন ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১৫ হাজার কাঁচা ইট ধ্বংস করে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২১ জানুয়ারি লংগদু উপজেলার দুই ইটভাটাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ ইটভাটার ড্রাম চিমনি ভেঙে দিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৫ জানুয়ারি কাপ্তাইয়ের রাইখালীর ভালুকিয়া এলাকায় চালুর উদ্যোগ নেওয়ায় একটি বন্ধ ইটভাটাকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০ নভেম্বর লংগদুর আটারকছড়ায় একটি ইটভাটাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ড্রাম চিমনি ধ্বংস করে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

খাগড়াছড়িতে ১৬টি ইটভাটায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও চার হাজার ঘনফুট জ্বালানি কাঠ জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি রামগড়ে তিন ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা, ২৯ জানুয়ারি মাটিরাঙ্গায় পাহাড় কাটার দায়ে এক ব্যক্তিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি রামগড়ে চারটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে চার হাজার ঘনফুট জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়। ৯ ডিসেম্বর রামগড়ে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর অপরাধে দুটি ইটভাটাকে ১ লাখ টাকা, ৬ ডিসেম্বর মাটিরাঙ্গায় আদর্শগ্রাম ও ইসলামপুরে দুই ইটভাটায় দেড় লাখ টাকা এবং ৩০ নভেম্বর গুইমারায় পাঁচটি ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বান্দরবানে ছয়টি ইটভাটায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে ২৫ জানুয়ারি লামা উপজেলার আজিজনগরে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ১৫ জানুয়ারি থানচি উপজেলার একমাত্র এসবিএম ইটভাটাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর বান্দরবানে জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু পাড়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চারটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সব লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি রুলসহ এ আদেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিন জেলার বিভিন্ন ইটভাটার মালিকরা রিট পিটিশন করলে তা খারিজ ও আপিল বিভাগে দুটি আপিল করলে আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন চেম্বার কোর্ট, স্থিতাবস্থা বৃদ্ধি করেননি।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও পাহাড়ে অবৈধ ইটভাটা চালু থাকার বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসায় সর্বশেষ গত ৯ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে তিন জেলা প্রশাসককে নোটিশ পাঠানো হয়। অন্যথায় জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ অনুসারে অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এইচআরপিবির পক্ষে এ নোটিশ পাঠান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এর পরই এ অভিযানে নামে মাঠ প্রশাসন।

রাঙ্গামাটির সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, জেলায় ২৫টি ইটভাটা আছে। এদের কোনোটিরই লাইসেন্স নেই। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ইতোমধ্যে জেলার বেশ কিছু উপজেলায় কয়েকটি অবৈধ ইটভাটাকে আর্থিক জরিমানাসহ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য জেলার সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুত্র খবরের কাগজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions