ডেস্ক রির্পোট:- মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পালংখালী, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়ি ও আশপাশের গ্রামগুলোতে। তিন দিন ধরে আরকান আর্মির সঙ্গে এই গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এ কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সীমান্তের মানুষ। অবশ্য, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে গত চার দিন ধরে থেমে থেমে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার রাতে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন, হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্ণীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, পালংখালী, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্ত। গত শনিবার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি চলছে। সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) লড়াই চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এতে অনেকে হতাহত হয়েছেন। এ অবস্থায় আমাদের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন বলেন, বালুখালী, পালংখালী ও আনজুমানপাড়ার বিপরীতে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় এখনও থেমে থেমে প্রচুর গোলাগুলি চলছে। আতঙ্কে আমাদের সীমান্তের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে আশপাশের এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র বলছে, বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুম সীমান্তে রাখাইনে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাখাইনের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্পে অভিযান জোরদার করেছে তারা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও আন্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দে গোলাগুলি চলছে। এ অবস্থায় সীমান্তের বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির সঙ্গে গৃহযুদ্ধে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এ পর্যন্ত ২২৯ জন বিজিপির সদস্য। তাদের অনেকে আহত হয়েছেন।
বিজিবি সদর দফতরের গণসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতে সীমান্ত পার হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২২৯ বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢেকিবুনিয়া এলাকার বিজিপি ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এলাকা থেকে একটি মর্টারশেল এসে সীমান্তের এপারে দক্ষিণ ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে বেতবুনিয়া এলাকার একটি বাড়ির জানালায় আঘাত হেনেছে। সীমান্ত এলাকার আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এমকেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, খুব সকাল থেকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়া এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিজিপির ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এলাকায় তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ একটি মর্টারশেল এসে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের এলাকার সৈয়দ নুর শিকদার নামে এক ব্যক্তির বসতঘরের একপাশে আঘাত করে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্তের এক কিলোমিটার ভেতরে এসে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সকালে ওপার থেকে কিছু অস্ত্রধারী লোক এপারে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
লম্বাবিল সীমান্তের বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, ‘সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় সপ্তাহজুড়ে যুদ্ধের গোলাগুলি, মর্টারশেল, গ্রেনেডের আওয়াজ শুনে আসছিলাম। এখন হয়তো সে দেশের সরকার আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন হয়েছে।’
উখিয়ার ধামনখালী সীমান্তে বসবাসরত মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ চলছে সীমান্তের ওপারে। সকাল ৯টার পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ বেশকিছু লোক অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি আটক করছে বলে শুনছি।’
এর আগে, সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল সীমান্তের ঘুমধুমে একটি বাড়িতে এসে পড়ে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে আসলেও গত তিন দিন তুমুল লড়াই হচ্ছে।
সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিপি ছাড়াও অর্ধশতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে।