ডেস্ক রিরোট:- বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কেউ বা স্থায়ী হয়েছে প্রবাসে। ব্যক্তিগত ফৌজদারি মামলায় পড়ে অনেকে পলাতক। এরপরও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে তারা বেতন- ভাতা তুলে নিচ্ছে। এতে সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। বিষয়টি জানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তবুও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর সংখ্যা হবে অন্তত ৫০ জন। হাসপাতালের নার্সদের বেতন ভাতার বিষয়টি দেখভাল করতো ঘুষের টাকা গ্রহণের মামলার আসামি পলাতক থাকা ব্রাদার ইসরাঈল আলী সাদেক।
পলাতক হওয়ার পর থেকে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিষয়টি জানার পর তারা নার্সিং অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে অবগত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
৯ই জানুয়ারি গোয়েন্দা অভিযানে ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার হয় ওসমানী’র নিয়ন্ত্রক ও স্টাফ নার্স সাদেকের সহযোগী স্টাফ নার্স আমিনুল ও সুমন। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাদেক। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের প্রায় ৫০ জন স্টাফ নার্স বছরের পর বছর থেকে অনুপস্থিত রয়েছে। তাদের নামে তোলা হচ্ছে বেতন ভাতা।
এরমধ্যে রয়েছেন- স্টাফ নার্স মো. ইউসুফ, আব্দুর রহমান, মিলি রানী, আওলাদ হোসেন, জাহেদ আহমদ, রহিমা বেগম, মাজেদা বেগম, এএসএফকে আল জান্নাহ, লাজ দেবী তালুকদার, একরামুল হক, রুনা বেগম, হুমায়ূন কবির, জাফর ইকবাল, কামরুন্নাহার, লাকী বেগম, ঝিলি ধর, শাহনাজ আক্তার খান, জুয়েল আহমদ, আলী আশরাফ কামরুল, শামীমা জান্নাত, শাহীন মিয়া, শাফিয়া রোকশানা, তপু চন্দ্র দাশ, সাকী বেগম, তৈয়বুর রহমান, আজিজা আক্তার আলী, তাসলিমা আক্তার, জাকেরা সিদ্দিকা তাপাদার, জান্নাতুল ফেরদৌস, মিহির সুলতানা, জয়দ্বীপ দে, রবীন্দ্র সূত্রধর, চম্পা পাল, শাহানুর তালুকদার, সুলতানা বেগম, লাভলী বেগম, রিনা বেগম, গোলাম সরওয়ার, রিটা, শারমীন আক্তার ও মান্না আক্তার।
হাসপাতালে গোয়েন্দা অভিযানের পর থেকে পলাতক রয়েছে সাদেক। কারাগারে রয়েছে দু’জন। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, অনুপস্থিত থাকা নার্সদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশে চলে গেছেন। তাদের নামে বেতন ভাতা উঠছে। বেতন তোলার বিষয়ে তারা বলেন, হাসপাতালের নার্সদের বেতন শাখায় আগে বসতো সাদেকের অনুসারী সিনিয়র স্টাফ নার্স সুলেমান। বছর খানেক ধরে এ পদে আছে তৃষ্ণা ডি কস্টা। সাদেকের নির্দেশেই কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত না থাকা নার্সদের বেতন হতো। পরে অনুপস্থিত থাকা নার্সরা বেতনের সিংহভাগ টাকা সাদেককে দিয়ে দিতো। হাসপাতালের ডিডি, ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টসহ সব জায়গায় এ টাকার ভাগবাটোয়ারা যায়। এ কারণে কখনো ওই নার্সদের অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রকাশ হয়নি।
৯ তারিখ হাসপাতালে গোয়েন্দা অভিযানের পর বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়। তখন হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে দায়িত্বরত নার্স ছুটিতে থাকায় সেটি উদ্ঘাটন করা যায়নি। তারা জানান, অনুপস্থিত থাকা নার্সদের উপস্থিত দেখিয়ে সরকারের তহবিল থেকে ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন তদন্ত করা হচ্ছে। তবে নার্সিং অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানান, প্রায় ৬ মাস আগে তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর প্রথমেই এ বিষয়টি তিনিই উদ্ঘাটন করেন। এ ব্যাপারে নার্সিং অধিদপ্তরকে অবহিত করেছেন। কিন্তু নার্সিং অধিদপ্তর থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অনুপস্থিত থাকা নার্সদের বেতন ভাতা এখন বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালের নার্সরা জানান, হাসপাতালের সাদেক ও তার লোকজনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে গত অক্টোবর মাসে নার্সিং অধিদপ্তরে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন নার্স অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগে নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে নার্সরা উল্লেখ করেছিলেন- বেতন ভাতা সংক্রান্ত কাজে অফিসে গেলে নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকের নির্দেশে এক হাজার টাকা চার্জ গ্রহণ করা হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ যেকোনো ধরনের ছুটি মঞ্জুর করতে ৩-৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। উচ্চ গ্রেড প্রাপ্তির জন্য মহাপরিচালক বরাবর আবেদনের জন্য ৪ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। এই টাকা গ্রহণ করতো গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুল, সুমন ও বাইরে থাকা নজির হোসেন।
ওই আবেদনে নার্সরা উল্লেখ করেন, হাসপাতালের প্রায় ৭০ জন নার্স অনুপস্থিত রয়েছে। এসব বিষয় জানার পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন থেকে ওসমানী হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সাদেক পরবর্তীতে পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। এদিকে নানা সময় হয়রানির শিকার হওয়া নার্সরা জানিয়েছেন- সাদেকসহ অন্তত ১০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স হাসপাতালে কোনো দায়িত্ব পালন করতো না। তারা হাসপাতালে বসে নিয়ন্ত্রণ করতো। ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছিল শুধু কাগজে কলমে। বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার ছিল হাসপাতালের প্রশাসনও।