ডেস্ক রিরোট:- ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’তে ফের বড় ধাক্কার আশঙ্কা! প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ‘আম আদমির পার্টি’র (আপ) পক্ষ থেকে। আর এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে জোটের অন্যতম শরিক দল ‘জনতা দল ইউনাইটেড’ (জেডিইউ)। ইন্ডিয়া’র জোটের সংস্পর্শ ত্যাগ করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে’ (এনডিএ) ফিরতে পারেন নীতিশ কুমার। আপাতত এটাই ভারতীয় রাজনীতিতে জোর জল্পনার বিষয়।
বুধবার বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক দল কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পরিষ্কার জানিয়ে দেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনে তারা একাই লড়বে। মমতার এই ঘোষণার পরেই বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে।
মমতা ব্যানার্জির পর বুধবার বিকালে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে দ্বিতীয় ধাক্কা আসে আম আদমি পার্টির (আপ) পক্ষ থেকে। পাঞ্জাবের ক্ষমতাসীন দল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত মান জানিয়ে দেন ‘পাঞ্জাবে আমরা কংগ্রেসের সাথে কোনো জোট করছি না’। রাজ্যের ১৩টি লোকসভার আসনেই আপ এককভাবে জয় পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মতো আসন্ন লোকসভা ভোটে বিহারেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ‘জনতা দল ইউনাইটেড’ (জেডিইউ) প্রধান ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাহুলের নেতৃত্বাধীন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ চলতি মাসের ২৯ জানুয়ারি প্রবেশ করছে বিহারে। কিন্তু সূত্রে খবর সেই যাত্রায় অংশ নিচ্ছে না নীতিশের দল জেডিইউ।
শুধু তাই নয়, আরও একটি কারণে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই অন্যতম শরিক দল জেডিইউ এবং ‘রাষ্ট্রীয় জনতা দল’র (আরজেডি) মধ্যে মতানৈক্য প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
বুধবার বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার রাজনীতিতে পরিবার তন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, কর্পূরীর দেখানো পথেই তার দল (জেডিইউ) চলবে, পরিবারের কোনো সদস্যকে পার্টির শীর্ষ পদে বসানো হবে না। নাম না করলেও তার নিশানা ছিল রাজ্যের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদবের পরিবারের উদ্দেশে। কারণ লালু প্রসাদের এক ছেলে তেজস্বী প্রতাপ বর্তমানে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী, আরেক ছেলে তেজ প্রতাপ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। নীতিশ কুমারের ওই মন্তব্যের পরেই বৃহস্পতিবার টুইট করে তাকে কড়া ভাষায় তোপ দেগেছেন লালু প্রসাদের কন্যা রোহিনী আচার্য। তিনি লেখেন, ‘কখনো কখনো মানুষ তার নিজেদের ত্রুটিগুলো দেখে না। কিন্তু নির্বোধতার সাথে অপরের দিকে কাদা ছুঁড়তে থাকে।’
যদিও বিতর্কের পর সেই টুইট মুছে ফেলেন রোহিনী। আর এ থেকেই বিহারের রাজনীতিতে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে তবে কি ফের রং বদল করতে চলেছেন নীতিশ কুমার।
জল্পনা চলছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সংস্পর্শ ত্যাগ করে বিজেপির হাত ধরতে পারেন তিনি। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বিহারের বেতিয়ায় লোকসভা ভোটের প্রচারণায় মোদির সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন নীতিশ কুমার।
সূত্রের খবর, ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে’ (এনডিএ) যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষ থেকে একটি শর্ত আরোপ করা হয়, সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে নিতীশ কুমারকে। ইতিমধ্যেই দলের সব বিধায়কদের পাটনায় ডেকেছেন নীতিশ। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া এবং বিজেপি, জিতেন রাম মাঝির দল হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চাসহ অন্য দলগুলোর সমর্থনে সরকার গঠনের দাবি জানানোর বিষয়টি স্থির হতে পারে।
কয়েকদিন আগেই কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদান করে মোদি সরকার। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদির এই মাস্টারস্ট্রোকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে মোদির কাছে আসতে পারেন নীতিশ। যদিও সবটাই এখন জল্পনা। তবে নিতীশের দলবদলের ইতিহাস নতুন নয়, ২০১৩ থেকে পাঁচবার জোট পরিবর্তন করেছেন নীতিশ কুমার। কখনো এনডিএ, আবার কখনো মহাজোটের শরিক হয়েছে তার দল জেডিইউ।
এদিকে, মমতার ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা যে আর কোনোভাবেই কংগ্রেসকে সহ্য করতে পারছে না, তা এক কথায় পরিষ্কার বৃহস্পতিবারের একটি ঘটনায়।
এদিন সকালের দিকে আসাম থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে রাহুলের নেতৃত্বাধীন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। এদিন ১২তম দিনে পড়ল রাহুলের এই ন্যায় যাত্রা। কোচবিহার জেলার বক্সীরহাটে রাহুলকে স্বাগত জানান কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সভাপতি ও সাংসদ অধীরঞ্জন চৌধুরী। এরপর বক্সীরহাটে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাহুল। এরপর একটি ‘রোড শো’তে অংশ নিয়েই তড়িঘড়ি দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন রাহুল।
এদিনের সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, গোটা ভারতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ লড়াই করবে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে এসে আমি খুশি। আমরা এখানে এসেছি আপনাদের কথা শুনতে এবং আপনাদের পাশে দাঁড়াতে…বিজেপি-আরএসএস ঘৃণা, হিংসা ও অবিচার ছড়াচ্ছে। তাই ‘ইন্ডিয়া’ জোট একসঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চলেছে।’
গত ১৪ জানুয়ারি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর থেকে এই ন্যায় যাত্রার শুভ সূচনা করেন রাহুল গান্ধী। আগামী ২০ মার্চ এই যাত্রা শেষ হবে পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে। কিন্তু রাহুলের নেতৃত্বে এদিন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা কোচবিহারে প্রবেশের পর একটি সংগঠনের পক্ষে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এমনকি রাহুল গান্ধীর গাড়ি বহরের সামনে ওই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত হয়ে স্লোগান-শাউটিং করতে থাকে বলে অভিযোগ। এদিন কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি এলাকায় তিনি যখন রোড শোয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তার কাছেই ওই সংগঠনের পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভকারীদের হাতের পোস্টারে লেখা ছিল ‘বাংলায় দিদি একাই একশ’। তবে কংগ্রেসের একাংশের ধারণা ওই সংগঠনের সদস্যরা আসলে তৃণমূলেরই লোকজন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দল তৃণমূলের কাছ থেকে পাওয়া এই ব্যবহারে বিরক্ত রাহুল নিজের কর্মসূচি অসমাপ্ত রেখেই দিল্লি ফিরে গেলেন? কারণ এদিন ফালাকাটা টাউন ক্লাবের মাঠে নাইট হল্ট করার কথা ছিল রাহুলের। যদিও রাহুলের এই আচমকা দিল্লি যাত্রা নিয়ে দলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বিজেপিকে উৎখাত করতে সাত মাস আগে গঠিত হয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কিন্তু এরই মধ্যে অশান্তির আগুন জোটে।