ডেস্ক রিরোট:- দক্ষিণ ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবরের হামলা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে একটি ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামলার ন্যায্যতা দাবির পাশাপাশি তারা এও স্বীকার করেছে যে, সেদিন ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়া এবং গাজার সীমান্ত এলাকায় বিশৃঙ্খলার কারণে কিছু ত্রুটি ঘটেছে’।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেই নজিরবিহীন হামলা নিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটিই হামাসের প্রথম কোনো প্রকাশ্য নথি। ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে আক্রমণের পটভূমি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের দীর্ঘ ছুটির শেষ দিকে শত শত হামাস যোদ্ধা স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলে প্রবেশ করে। রাস্তায়, বাড়িতে এবং একটি উন্মুক্ত কনসার্টে তারা হামলা চালায়।
ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০০ ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক এবং ৭৬ জন বিদেশি রয়েছে। একজন ইসরায়েলি এখনো নিখোঁজ।
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, হামলার সময় বন্দুকধারীরা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় প্রায় ১৩২ জন বন্দী এখনো রয়ে গেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে হামাস বলেছে, ‘যদি বেসামরিক লোকদের টার্গেট করার কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা দুর্ঘটনাবশত এবং দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এটি ঘটেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিভ্রান্ত হওয়ার কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতেই অনেক ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।’
৭ অক্টোবরের ঘটনার পরও গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে মারাত্মক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল গাজা সীমান্তে এবং লেবাননের সঙ্গে উত্তর সীমান্তে কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। তারা গাজাকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে পানি, বিদ্যুৎ এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে গাজায় অন্তত ২৫ হাজার ১০৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু এবং কিশোর–কিশোরী।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার অভিযোগ করে আসছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার সময় হামাসের যোদ্ধারা দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌনাঙ্গ বিকৃত করা এবং শিশু ও মৃতদেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তবে তারা এসব অভিযোগের সপক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
হামাস অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, হামাসকে ‘দানব’ হিসেবে উপস্থাপনের লক্ষ্যেই ইসরায়েল এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে।
হামাস বলেছে, ৭ তারিখের আক্রমণটি ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সমস্ত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’।
রোববারের প্রতিবেদনে ‘গাজার ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন, সমগ্র গাজার জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং জাতিগত নির্মূল করার প্রক্রিয়া’ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। তারা বলেছে, তারা গাজার যুদ্ধোত্তর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক এবং ইসরায়েলের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে।
হামাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা জোর দিচ্ছি যে, ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো গুছিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের কোনো পক্ষেরই তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।’
সংঘাতের ঐতিহাসিক উৎসের দিকে ইঙ্গিত করে হামাস বলেছে, ‘আধিপত্য ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের যুদ্ধ ৭ অক্টোবর শুরু হয়নি, বরং ১০৫ বছর আগে শুরু হয়েছিল, এর মধ্যে ৩০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা এবং ৭৫ বছরের ইহুদিবাদী দখলদারি।’
ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের পেছনে ‘আইনিভাবে ইসরায়েলি দখলদারিকে দায়ী’ করেছে হামাস।