ডেস্ক রির্পোট:- সোর্সের মাধ্যমে খবর নেওয়া হয় কোন বাড়িতে নগদ টাকা আছে। ওই বাড়িতে মাদক থাকুক আর না থাকুক, বাসায় প্রচুর পরিমাণে মাদক আছে, এই বলে শুরু হয় অভিযান। ৫ থেকে ৭ জনের একটি দল এই অভিযানটি চালায়। দলটির নেতৃত্ব দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খিলগাঁও অঞ্চলের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম। দলে থাকে শাহ আলমের বিশ্বস্ত একাধিক সিপাহি ও সোর্স। পরিবারের সদস্যদের আটক করে তল্লাশি চালান তারা। এরপর দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। মামলার ভয় দেখিয়ে বাসায় থাকা নগদ টাকা নিয়ে আসেন শাহ আলমের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরা।
এই কায়দায় গত ২৯ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন শাহ আলম ও তার দল। এই পদ্ধতিতে ঘুরে ঘুরে অভিযানের নামে ডাকাতি করার আরও অভিযোগ রয়েছে শাহ আলমের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) ব্যবসায়ী ববি এন ডিয়াজ। একই ঘটনায় ববি ভাটারা থানায় ৪ জানুয়ারি মামলা করেছেন। এই মামলায় শাহ আলমের সোর্স ফয়জুল ইসলাম রাসেল ওরফে ভাইস্তা রাসেল, মাদক কর্মকর্তা শাহ আলম, বাবরসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এক নম্বর আসামি রাসেলকে গ্রেপ্তার করলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহ আলমকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাদীর। ভাটারা থানা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহ আলম ও তার দলের সদস্যরা ঘটনার দিন মাদকের সন্ধানে ওই বাসায় অভিযানে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ভুক্তভোগীর বাসা থেকে আসামিরা টাকা নিয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ববির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৯ ডিসেম্বর রাতে শাহ আলমের নেতৃত্বে ৭-৮ জন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এফ ব্লকের ৮ নম্বর সড়কের ১৫৪ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। রাত ৮টার দিকে তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রবেশ করে। কী কারণে এসেছে জানতে চাইলে শাহ আলম ও তার দলের সদস্যরা জানায়, আমাদের কাছে গোপন তথ্য আছে আপনার বাসায় বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য আছে। বাসায় কোনো মাদক নেই বললেও অভিযানে থাকা সদস্যরা পুরো বাসা ওলট-পালট করে দেড় ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায়। তারা বাসায় কোনো মাদকদ্রব্য পায়নি। তবে আলমারির ড্রয়ারে থাকা নগদ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা তারা দেখতে পায়।
মাদক কর্মকর্তা ও তার দলের সদস্যরা তল্লাশি শেষে কোনো মাদক না পেলেও ববি ও তার স্ত্রী এলিন রেসেল পেরেরাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় বলে দাবি করেন ববি। তিনি বলেন, তারা আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। অন্যথায় ২০ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা স্বামী-স্ত্রী আমাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমরা বলি, আমাদের কাছে এত টাকা নেই। এত টাকা আমরা দিতে পারব না। তখন অভিযানে থাকা একজন বলে, আপার ড্রয়ারে তো অনেক টাকা, এই টাকাগুলো আমাদের দিয়ে দেন, বাকি টাকা পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে দিয়ে দেবেন। বাবর পোশাক পরা ছিল। তারা ড্রয়ার খুলে টাকাগুলো নিতে চাইলে আমি রাজি হয়নি। কিন্তু আমার স্ত্রী এলিন রেসেল পেরেরা টাকাগুলো ওদের হাতে তুলে দেয়। টাকা পেয়ে আমাদের গ্রেপ্তার না করে ওরা চলে যায়।
নগদ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পর বাকি টাকা দ্রুত না দিলে মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায় তারা। ভুক্তভোগী ববি জানান, অভিযানে শাহ আলম, বাবর ও একজন নারী পোশাক পরিহিত ছিলেন। বাকিরা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। ২৯ তারিখ নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ার পর ২ জানুয়ারি বাকি ১৬ লাখ টাকা চেয়ে একটি নম্বর থেকে কল আসে বলে জানান ববি। পরে জানা যায়, কল আসা মোবাইল নম্বরটি গ্রেপ্তার হওয়া ভাইস্তা রাসেলের। সে শাহ আলমের সোর্স হিসেবে কাজ করে।
এসআই শাহ আলম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) খিলগাঁও সার্কেলে কর্মরত। অভিযানের বিষয়ে দক্ষিণের উপপরিচালক মো. মাসুদ হোসেন বলেন, ঘটনার দিন এসআই শাহ আলমসহ ৭ সদস্য ববি ডিয়াজের বাসায় অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো মাদকদ্রব্য পায়নি। যেটা তারা রিপোর্টেও উল্লেখ করেছে। ওই বাসা থেকে টাকা আনার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার বিভাগীয় তদন্ত চলেছে।
বিভাগীয় অভিযোগটি তদন্ত করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) কাজী আল আমিন। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
ভাটারা থানায় করা মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই শামীম হোসেন। তিনি বলেন, মামলার পরপরই এক নম্বর আসামি ফয়জুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কালবেলা