ডেস্ক রির্পোট:- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার। ইতোমধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ পড়াবেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ৩০ জনই নতুন তালিকায় ঠাঁই পাননি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, মন্ত্রণালয়ে অনুপস্থিতি, দাপ্তরিক কাজে অবহেলা এবং বৈদেশিক সম্পর্কে অবনমনসহ নানা কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিত্বের সুবিধা নিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্বজনপ্রীতি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব ও গণমাধ্যমে অতিকথনের কারণেও নতুন মন্ত্রিসভায় অনেকের জায়গা হয়নি। এ ছাড়া নতুনদের জায়গা দিতে একাধিক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সরকার ও দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া ৩৬ জনকে শপথ নেওয়ার জন্য আজ বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৪ জন সংসদ সদস্য আর বাকি দুজন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হচ্ছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে মোট ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আছেন। তাদের মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রীসহ ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর টেকনোক্র্যাট কোটায় দায়িত্ব পাওয়া দুই মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তারাসহ মোট ৩০ জনকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন মন্ত্রী ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী।
মন্ত্রীদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন কামাল আহমেদ মজুমদার, জাহিদ আহসান রাসেল, আশরাফ আলী খান খসরু, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, জাকির হোসেন, শাহরিয়ার আলম, স্বপন ভট্টাচার্য্য, শরীফ আহমেদ, কে এম খালিদ, এনামুর রহমান, মাহবুব আলী, বেগম ফজিলাতুন নেসা। দুই উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার ও এ কে এম এনামুল হক শামীমকেও রাখা হয়নি নতুন তালিকায়। তাদের মধ্যে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও কে এম খালিদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। এ ছাড়া মাহবুব আলী, এনামুর রহমান ও স্বপন ভট্টাচার্য্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নিত্যপণ্যের বেসামাল বাজার, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয়, ক্রমহ্রাসমান ডলারের রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে বাদ পড়েছেন অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশের চলমান এই সংকটে এ দুই মন্ত্রীই চরম উদাসীন থেকেছেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাদ পড়েছেন বলে অনেকের দাবি। বাণিজ্যমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ছাড়াও নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণকেও মূল কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
সারা বছরই নানা মন্তব্য করে আলোচনায় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। একেক সময় তার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বক্তব্যের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় বিব্রত হয়েছে। এ ছাড়া তার মন্ত্রিত্বের পুরো সময়েই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেশে-বিদেশে ব্যর্থতাও বড় কারণ বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে। সেই প্রতিবেদনে জাবেদের বিদেশে ছয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, এসব কোম্পানির সম্পদের মূল্য ১৬ কোটি ৬৪ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এসব সম্পদের তথ্য তিনি নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করেছেন। ভূমি ব্যবস্থাপনার নানা সংস্কার করেও মন্ত্রী হিসেবে না থাকায় অনেকে অবাক হয়েছেন। মন্ত্রীর তালিকায় না থাকার পেছনে টিআইবির ওই প্রতিবেদনকেই দায়ী করছেন অনেকে।
‘নির্বাচনে বিএনপিকে নানা প্রস্তাব দিয়েও আনা যায়নি’—এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে ফেঁসে গেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ওই বক্তব্য মন্ত্রিসভা থেকে তার বাদ পড়ার কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
করোনাকালীন নানা কারণে সমালোচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মহামারির সময়ে সঙ্গনিরোধকালে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। করোনার টিকা নিয়ে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য যে এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সেই জায়গাগুলো নিজে, ছেলেমেয়ে ও ফুপাতো ভাইয়ের নামে কিনে বিতর্কিত হন এই মন্ত্রী।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনকে ডুবিয়েছেন তার ছেলে, ভাই, ভাগনেসহ স্বজনরা। পাহাড়ের জায়গা দখল করে বাংলো নির্মাণ, বনের গাছ সাবাড় করে অবৈধ করাতকল, জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজ, ইউপি নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন, মন্ত্রণালয়ে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রীর ছেলে এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্নুজান সুফিয়ান দায়িত্ব পাওয়ার পর আপন ছোট ভাই ও নিজের সহকারী একান্ত সচিব এবং ভাতিজির নিয়ন্ত্রণে চলতে থাকে পুরো মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর এবং সংস্থার সব রকম নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির জমজমাট বাণিজ্যের কারণে তাকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া দলের মনোনয়ন ও মন্ত্রিত্ব দুটিই হারিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অন্যদিকে মনোনয়ন পেলেও তিন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, স্বপন ভট্টাচার্য্য ও এনামুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে হেরে যান।