যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় তত বেশি বেড়েছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২৩২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- যিনি যতবার নির্বাচন করেছেন, তাঁর আয় তত বেশি গাণিতিকভাবে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং নীরব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠ শক্তিশালী করা বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সম্পদ বৃদ্ধির হারের সঙ্গে নির্বাচিত হওয়ার একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার সম্পদ তত বেশি বেড়ছে। তাহলে বোঝা যায়, কেন ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত হতে চায় আর কেন নির্বাচিত হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। কারণ, নাগরিক অধিকার নয়, এর চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অধিকার পাওয়ার জন্য এই তথাকথিত নির্বাচন সবচেয়ে ভালো রাস্তা। এখানে রাষ্ট্রকে সংকীর্ণ করে একটা গোষ্ঠীকে সম্পদ দেওয়া হচ্ছে। এটাই এমন নির্বাচনের কুফলের জায়গা।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণে দেখা গেছে, সম্পদের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু তাঁরা কি সেই সম্পদ অনুপাতে আগের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি কর দিয়েছেন? আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, কর জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এর চেয়ে তো ভালো সুযোগ হবে না। এনবিআর কি সেই খোঁজ নিয়েছে? তখন সকলেই মুরগির খামারি বা মাছচাষি হয়ে যাবে। এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো পর্যালোচনাই এবার হলো না। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে পৌঁছাল না। এটা গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। নির্বাচন ঘিরে ইশতেহার একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্য দিয়ে এসেছে। ফলে সরকার, রাজনীতি ও দেশের মানুষ বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই নির্বাচন প্রথম নয়, এ ধরনের নির্বাচন দেখেছি ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালে। এটা আসবে যাবে। নির্বাচন যদি মৌলিক, রাজনৈতিক ও বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, এটাকে সাধারণভাবে নির্বাচন বলা হচ্ছে। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে এটি একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। আগামী দিনে নাগরিক ভূমিকা আরও বাড়বে। নিশ্চুপ থাকার সময় এটা নয়। কেউ নিশ্চুপ থাকলে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে এমন নয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ইশতেহার একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে এসেছে। যার ফলে এর প্রয়োজনীয় যে তাৎপর্য ছিল, সেটা থেকে সরকার, রাজনৈতিক শক্তি, নাগরিক সবাই বঞ্চিত হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি তার ক্ষমতা বাস্তবায়নের সৎ সাহস থাকত, তাহলে অনেক কিছু হতে পারত। কারণ, আইন অনুযায়ী অন্য কিছু বাদ দিলেও তথ্য গোপন করার অপরাধে প্রার্থিতা বাতিল হবে। যাঁকে নিয়ে বলা হয়েছে, তিনি মেনেও নিয়েছেন। তারপরেও কিছু করা হচ্ছে না।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এভাবে সম্পদ বিকাশের জন্য কি রাজনীতি করা হচ্ছে, না জনস্বার্থে করা হচ্ছে? যদি সম্পদ বিকাশের জন্য হয়, তাহলে উত্তর হবে হ্যাঁ। তাহলে খোলাখুলিভাবে বলে দিলেই ভালো। তথ্য প্রমাণে তাই বলছে। সেই কারণে একটি পাতানো প্রতিযোগিতায় ও রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের নামে যেটা হচ্ছে, সেটাকে কী নামে অভিহিত করি!

টিআইবির পরিচালক বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে, যদিও সাজানো। পরিষ্কারভাবে সাজানো। এটা অস্বীকার করছে না কর্তৃপক্ষ। সাজানো এবং অনেকটা আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উন্নয়নকর্মী ও জেন্ডার বিশ্লেষক এম বি আখতার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন প্রমুখ।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions