ডেস্ক রির্পোট:- পর্যটনের ভরা মৌসুমেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সাজেকে নেই পর্যটক। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই পর্যটক নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল জেলা তিনটির প্রায় আট হাজার মানুষ জীবিকার সংকটে পড়েছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতিতেও লেগেছে মন্দার ভাব।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌলভীবাজারে সারা বছরেই পর্যটকদের পদচারণ থাকে। নভেম্বর থেকে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ কারণে দেড় শতাধিক রিসোর্ট-কটেজ গড়ে উঠেছে জেলায়।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, স্থানীয় অর্থনীতির ৩০ শতাংশ পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার ভরা মৌসুমেও নেই পর্যটক। শহরের খাবার হোটেলসহ পর্যটকনির্ভর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
নির্জন ইকো রিসোর্টের পরিচালক ছোটন হক জানান, এখন যেখানে শতভাগ বুকিং থাকার কথা, সেখানে শূন্য পড়ে আছে কক্ষগুলো।শ্রীমঙ্গল পদ্মা টি হাউসের পরিচালক মেঘনাথ হাজরা জানান, পর্যটকেরা এখানকার চায়ের বড় ক্রেতা। কিন্তু কিছুদিন ধরে পর্যটক না আসায় চা-বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। তাঁর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পর্যটকদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় ট্যুর গাইডদের জীবিকা। তাঁরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। লাউয়াছড়া ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল বলেন, ‘ভরা মৌসুমে একটানা পর্যটক শূন্যতা আমরা দেখিনি। এবার বেকার সময় কাটাচ্ছি।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটনসেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, ‘মৌলভীবাজারে মোট হোটেল-রিসোর্ট প্রায় দেড় শ। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এর বাইরে পর্যটকদের ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা, পরিবহন, গাইডসহ আরও প্রায় দুই হাজার মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় সবাই বিপাকে পড়েছেন।’
এ ছাড়া গত ১৫ দিনের হরতাল ও অবরোধে পর্যটন এলাকা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সাজেকেও চলছে সুনসান নীরবতা। পর্যটন ঘিরে এখানে গড়ে ওঠা প্রায় ৩০০ হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টে চলছে পর্যটক খরা। তেমনি পর্যটক বহনকারী শতাধিক গাড়ির চাকাও প্রায় অচল। ফলে হোটেল-মোটেল ও গাড়ির পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক, দোকান কর্মচারীর অলস সময় কাটছে।
হোটেল, মোটেল সূত্রে জানা গেছে, হরতাল ও অবরোধে পর্যটক শূন্যের কোটায় ঠেকেছে। ফলে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন অনেকটা জনমানবহীন।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র সাজেক। এই দুই জেলায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। মাত্র ১৫ দিন আগেও যেখানে অগ্রিম বুকিং ছাড়া রাত কাটানো ছিল দায়। আর এখন অনেক কক্ষ খালি পড়ে আছে। ফলে হোটেল-মোটেলের কর্মচারী ও যানবাহন শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে মালিক পক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সাজেক নীল পাহাড়ি রিসোর্টের মার্কেটিং ও বুকিং ম্যানেজার মো. রাসেল জানান, রিসোর্টের ছয়টি কক্ষে ২৪ জন থাকতে পারেন। গতকাল সোমবার মাত্র দুটি কক্ষে আটজন ছিলেন।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া বলেন, বন্ধের দিনগুলোতে আগের চেয়ে কমেছে পর্যটক। এদিকে সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহসভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী জয় বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাজেকের রুম বুকিং ৭০ শতাংশ কমে গেছে।আজকের পত্রিকা