ডেস্ক রির্পোট:- খাগড়াছড়ির ১১টি খাদ্যগুদামে সরকারি খাদ্যশস্য ওঠানো-নামানোর জন্য সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী ঠিকাদারদের নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দরপত্র জমা দেওয়া ৩০০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে সর্বনিম্ন দরের দ্বিগুণ দরপ্রস্তাবকারীদের নিয়োগ দেওয়া
হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই আগের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদার।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের অধীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর এসব নিয়োগদান সম্পন্ন করেছে। ফলে ২০২২-২৩ এবং আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্যগুদামের শস্য ওঠানো-নামানোর কাজে সরকারকে অতিরিক্ত দেড় কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, খাগড়াছড়ি জেলায় ১১টি খাদ্যগুদাম রয়েছে। এসব খাদ্যগুদামে দুই বছরের জন্য খাদ্যশস্য ওঠানো-নামানোর কাজে ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছরের জুলাইয়ে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শেষ দিনে দরপত্র জমা দেয় ৩০০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধি অনুযায়ী, দরপত্রের মূল্য যাচাই করে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এখানে দরপত্রের মূল্য যাচাই ছাড়াই পুরোনো ১০ ঠিকাদারকে দ্বিগুণ দরপ্রস্তাবকারী ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়।
কাজ না পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রতি টন খাদ্যশস্য ওঠানো-নামানোর জন্য সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারীদের নিয়োগ না দিয়ে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ১১৮ টাকা দরপ্রস্তাবকারী আগের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়। এতে আগামী দুই বছরে সরকারের দেড় কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পুনরায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদাররা হলেন রামগড় খাদ্যগুদামের আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার সুনিল কান্তি দাস, মানিকছড়ির দীপালী এন্টারপ্রাইজ, দীঘিনালায় তানজিলা এন্টারপ্রাইজ, মহালছড়িতে মেসার্স লুম্বিনী ট্রেডার্স, খাগড়াছড়ি সদরের মেসার্স হাসান অ্যান্ড কোং এবং গুইমারায় অপূর্ব ত্রিপুরা। এ ছাড়া তাইন্দং খাদ্যগুদামে মেসার্স এস কে ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, পানছড়িতে মেসার্স এয়ার মোহাম্মদ অ্যান্ড ব্রাদার্স নতুন নিয়োগেও আবার একই গুদামে নিয়োগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মেয়াদে মো. রফিকুল আলম তবলছড়ি খাদ্যগুদামের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার হিসেবে ছিলেন। এবার তিনি ছোট মেরুং, বাবুছড়াসহ দুটি গুদামের কাজ পেয়েছেন। আর তবলছড়ি খাদ্যগুদামে নতুন মুখ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে মেসার্স আসিফ কেরিয়ার। খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপান্তর চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাগড়াছড়ি ১১টি খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য ওঠানো-নামানোর কাজে ঠিকাদারদের এক বছরের জন্য ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সে হিসাবে উচ্চ দরে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন ঠিকাদারদের পেছনে এবার ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (বর্তমান চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) সুমাইয়া নাজনীন বলেন, বর্তমান বাজার দর বিবেচনায় নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে।
সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে বেশি দরদাতা ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন সুমাইয়া নাজনীন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ সরকারি নিয়মনীতি মেনেই খাগড়াছড়ি জেলার ১১টি খাদ্যগুদামে দুই বছরের জন্য খাদ্যশস্য ওঠানো-নামানোর কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ৩০০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে আগের ১০ ঠিকাদার নিয়োগ পেলেন, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান এই কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. এইচ এম কায়সার আলী বলেন, ‘এভাবে অনিয়ম হওয়ার কথা না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিব।’আজকের পত্রিকা