চট্টগ্রাম:- চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ৯ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করে আদালত।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিতিতে ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত মহানগর পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মামলাটির শুনানির সময় কাঠগড়ায় বাবুল আক্তারসহ (৪৬) পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা আসামিরা হলেন–এহতেশামুল হক ভোলা (৫৪), মোতালেব মিয়া ওয়াসিম (৩৩), আনোয়ার হোসেন (২৮) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)। এই মামলায় আরও দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। চার্জ গঠনের আগে আদালতে উপস্থিত আসামিদের দোষী নাকি নির্দোষ-তা জানতে চেয়েছিল আদালত।’ এ সময় আসামিরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, ‘একই সময় আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামে না রেখে অন্যত্র কারাগারে রাখার বিষয়ে একটি আবেদন করেন। এ সময় নারাজি দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছেন, একাধিক মামলার আসামি ও সাক্ষী বাবুল আক্তার। বিভিন্ন মামলার ধার্য তারিখে তাঁকে অন্য কারাগার থেকে এখানে নিয়ে আসা সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলায় পড়তে হয়।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলেছেন, বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম কারাগারে নিরাপদবোধ করছেন না। পুলিশে কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আদেশ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিপক্ষ বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখা হলে তাঁকে আলাদা কোনো সেলে বা শ্রেণিতে রাখার বিষয়ে আদালতে আবেদন করেন। এ ছাড়া তার অসুস্থতার কথাও বলা হয়। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসাসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। কোনো সমস্যা হলে পরে আদালতে একটা পিটিশন দাখিল করতে বলেন আসামিপক্ষকে।’
আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী শিশির মনির আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগ গঠন থেকে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সেটা খারিজ করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রথম মামলাটির বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজে। পরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। পরে দ্বিতীয় মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর প্রথম মামলায় অভিযোগপত্র দিল। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ নেই।’
আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন, ‘মিতু হত্যার পরে ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা বর্তমানে মামলার নথিতে নেই। কারণ তাঁরা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। ঘটনার সময় বাবুল ছিলেন ঢাকায়। মুছাকে দিয়ে হত্যা করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই মুছা কোথায়। গায়ত্রী নামের একজনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে স্ত্রী মিতুকে হত্যা করিয়েছেন বলে অভিযোগ। গায়ত্রী কোথায়। তাহলে কীভাবে বিচার করবেন।
এর আগে বিকেলে আদালতের অনুমতি নিয়ে আসামি বাবুল আক্তার এডিসি প্রসিকিউশন কার্যালয়ে তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ পান। এ ছাড়া আজ একই আদালতে আসামির আরও দুটি মামলার ধার্য তারিখ ছিল। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া পৃথক ওই দুটি মামলায় বাবুল আক্তারের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি এলাকায় মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন মাহমুদার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘদিন ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্তের কাজ করেন।
পরে ডিবির হাত ঘুরে মামলাটি পিবিআই এর হাতে আসে। ২০২১ সালে ১১ মে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়। পরদিন ১২ মে বুধবার পিবিআই প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাবুল নিজেই তাঁর স্ত্রী হত্যার সঙ্গে ‘জড়িত’।
বাবুলের দায়ের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। একইদিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর বাবুল কারাগারে রয়েছেন।
২০২১ সালে ৩ নভেম্বর বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ না করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ১০ অক্টোবর পিবিআই বাবুলকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।
ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মাহমুদাকে খুন করা হয়। এ জন্য বাবুল তাঁর সোর্স মুসার মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় খুনিদের ভাড়া করেন। তবে ঘটনার শুরু থেকে আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা ও খায়রুল ইসলাম প্রকাশ কালু পলাতক রয়েছেন।