চট্টগ্রাম:- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অভিযান শুরু করে সংস্থাটি। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আর কোনো হতাহত শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিস্ফোরণর ঘটনায় নিহত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক আজকের পত্রিকাকে জানান, বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন ভাটিয়ারীর জাহানাবাদ কদমরসুল এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে শামছুল আলম (৬২), বিএমএ গেট বানু বাজার এলাকার আবুল বাশার মিয়ার ছেলে ফরিদ (৩৬), নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ছোট মনগড়া এলাকার মিকি রোঙ্গী লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫), নোয়াখালীর মাইজদী থানার অলিপুর এলাকার মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে মো. আবদুল কাদের (৫৮), লক্ষ্মীপুরের কমল নগর থানার মহিদুল হকের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৩) ও অজ্ঞাত একজন।
এদিকে রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল। এই দলের নেতৃত্ব দেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান তোফাজ্জল হোসেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ জানান, রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করেন তাঁরা। এতে অংশ নেন আগ্রাবাদ ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি উদ্ধারকারী দল। সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান চালালেও এ পর্যন্ত কোনো হতাহত শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি।
আবদুল হামিদ আরও জানান, অক্সিজেন রিফিলিং-এর সময় সময় প্ল্যান্ট থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
অক্সিজেন প্ল্যান্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন ছিল, তা খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। তবে বিস্ফোরণের পর পুরো অক্সিজেন প্ল্যান্ট কারখানা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আশপাশের স্টিল মিল, ভেজিটেবল মিল, অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ ৭টি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ম্যানেজার আব্দুল আলিম জানান, তাদের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা ছিল না। তবে কেন বা কী কারণে এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল সে ব্যাপারে তাঁর ধারণা নেই।
আব্দুল আলিম আরও জানান, তাঁদের কারখানায় ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মীচারী কর্মরত ছিলেন। বিস্ফোরণের সময় নিয়োজিত ছিল ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেই সঙ্গে রিফুয়েলিং এর জন্য আসা বহিরাগত শ্রমিক ছিলেন বেশ কয়েকজন। বিস্ফোরণের ঠিক আগেই তিনি কারখানা থেকে জরুরি কাজে বাইরে বের হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ মালিক কর্তৃপক্ষ বহন করবেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, সকালে উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর পর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। দ্বিতীয় দিনের মতো চলা এ উদ্ধার অভিযানে আর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি ছিল কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল কিনা সে বিষয়টি তদন্তের পর জানা যাবে। দুপুরে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে বিকেলে ঘটনাস্থলে এসে তদন্তকাজ করবেন। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে একটি মনিটরিং টিম গঠনের পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার নির্বাহ করা হবে।
বিস্ফোরণের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল (কেশবপুর) এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট লিমিটেড কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ৬ জনের প্রাণহানিসহ ৩০ জন আহত হন। বিস্ফোরণ পরবর্তীতে আগ্রাবাদ, সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর শুরু করেন উদ্ধার অভিযান। টানা পাঁচ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালানোর পর রাত ৯টার পর প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেন।আজকের পত্রিকা