ডেস্ক রির্পোট:- পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় এখনো তদন্ত পক্রিয়া শেষ হয়নি, দ্রুতই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবে ইডি। ২২ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ শেষে শনিবার বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি.কে হালদারসহ মোট ছয় অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে এমন কথা জানায় ইডির আইনজীবী।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, শনিবার ৬ নাম্বার অভিযুক্ত প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। দুপক্ষই তাদের মতো করে আদালতে সাওয়াল করেছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন করে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।’ তিনি আরো জানান ‘তদন্ত প্রক্রিয়া এখনো চলছে, সেক্ষেত্রে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে নতুন তথ্য উঠে আসছে। ফলে আমাদের তরফে নতুন করে অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।’
এদিন মূলত পিকে হালদারের ভাই এবং এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। মামলার শুরুতেই বাংলাদেশের আদালতে পেশ করা দুদকের সব তথ্য নিয়ে প্রাণেশের হয়ে আদালতে জামিনের জন্য লড়েন বিশিষ্ট আইনজীবী মিলন মুখার্জি। শুরুতেই তার দাবি ছিল গ্রেপ্তারকৃত প্রশান্ত কুমার হালদার ও পলাতক পৃথ্বীশ কুমার হালদার বাংলাদেশী নাগরিক এবং অর্থ তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত হলেও প্রাণেশ বেকসুর তার নামে দুদকের কোনও অভিযোগ নেই। প্রাণেশ কুমার হালদার অর্থ তছরুপের সঙ্গে যুক্ত নন এবং বাংলাদেশের নাগরিক নন। উপরন্তু মামলার প্রধান অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার এবং তার ভাই পৃথ্বীশ কুমার হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০১২’ (PMLA) অভিযুক্ত হলেও সে দেশে প্রাণেশ অভিযুক্ত নয়। তাকে ভারতের ‘অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২’ (PMLA) মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অর্থ তছরুপ সংক্রান্ত অপরাধ যখন সংঘঠিত হয়েছে প্রাণেশ তখন ভারতে ছিলেন। তাই একাধিক তথ্য তুলে আইনজীবী মিলন মুখার্জির বক্তব্য সেক্ষেত্রে প্রাণেশের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা যেতেই পারে।
Google News Channel24 অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
যদিও সেই জামিনের বিরোধিতা করে ইডি’র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতকে বলেন প্রাণেশ প্রত্যক্ষভাবে এই মামলায় জড়িত, সে জেনে শুনে তার ভাই পি.কে হালদারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তার সম্পত্তি এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। প্রশান্ত কুমার হালদারের কোম্পানি অ্যাকচুরাস অর্গানিক প্রাইভেট লিমিটেড ডিরেক্টর তিনি। ৮৩টি অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছেন তিনি। তাই এই মামলায় তার জামিনের প্রশ্নই উঠে না।
এদিকে আদালত থেকে বেরিয়ে পাল্টা মিলন মুখার্জী বলেন ‘আমরা প্রাণেশের জামিনের জন্য আবেদন করেছি, তার স্বপক্ষে সমস্ত কাগজপত্র আদালতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি জামিনের যোগ্য।
মামলার গতি প্রকৃতি নিয়ে তিনি বলেন ‘এটা এখনই বলা সম্ভব নয়, আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যেসব নথি জমা দিয়েছি, সেটাকে খণ্ডন করার জন্য ইডির তরফেও নতুন করে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করতে পারে।’
এদিকে এদিন শুনানি চলাকালীন আদালতে পিকে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের বাংলাদেশের দেওয়া বাংলা ভাষায় চার্জশিটের নথি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিচারক। এদিন শুনানি শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ইংরেজী ভাষায় চলে জামিনের আবেদনের শুনানি। একপর্যায়ে শুনানি চলাকালীন সময়ে বিচারকের হাতে বাংলা ভাষায় লেখা বাংলাদেশের দুদকের অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনের যাবতীয় নথি বিচারপতি হাতে তুলে দেন প্রাণেশের আইনজীবী মিলন মুখার্জী। বিচারক শুভেন্দু সাহাও বলে উঠেন ‘বাহ্! সবই তো দেখছি বাংলা ভাষায়।’
এ সময় ভাষার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। ইডির আইনজীবী দৃষ্টিপাত করে বলে ওঠেন ‘বাংলা ভাষার জন্য সে সময় অনেকেই প্রাণ দিয়েছিলেন।’
পরে বিচারকের হাতে বাংলা ভাষায় আইনি নথি তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে মিলন মুখার্জী জানান ‘বাংলা ভাষাটাকে একমাত্র বাংলাদেশই ধরে রেখেছে। আমি সত্যিই গর্বিত। আমি বাংলাদেশে গেছি সেখানে মামলা করেছি। এটা সত্যিই ভাবা যায় না।’
এদিন স্থানীয় সময় ১১ টা নাগাদ অভিযুক্তদের আদালতে আনা হয়। পৌনে ১২ টা নাগাদ তাদের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ ঘণ্টার উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে চলতি মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হবে বলে নির্দেশ দেন সিবিআই স্পেশাল কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহা ।
গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। ‘অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২’ (PMLA) এবং দুর্নীতি দমন আইন-১৯৮৮ মামলায় ওই ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়।
বর্তমানে অভিযুক্ত পিকে হালদার সহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে প্রেসিডেন্সি কারাগারে, অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ।