ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জন্মহার নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেছেন, রাজ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় জন্মহার বেশি, আর হিন্দুদের মধ্যে তা কমে যাচ্ছে। তাই হিন্দু দম্পতিদের তিনি এক সন্তানে না থেমে অন্তত দুইটি— আর সম্ভব হলে তিনটি করে সন্তান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে করে আবারও নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। খবর এনডিটিভি
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হিমন্ত শর্মা দাবি করেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সন্তান জন্মদানের হার বেশি, আর হিন্দুদের মধ্যে তা ক্রমেই কমছে। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সন্তান জন্মদানের হার বেশি। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এই হার নিচে নামছে। এখানে পার্থক্য আছে।’
এই কারণেই হিন্দু পরিবারগুলোকে বেশি করে সন্তান নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার ভাষায়, ‘তাই আমরা হিন্দুদের বলছি— এক সন্তানে থামবেন না, অন্তত দুই সন্তান নেন। যারা পারে, তারা তিনটাও নিতে পারে’। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মুসলমানদের বলি— সাত-আট সন্তান যেন না হয়; আবার হিন্দুদের বলি— আরও সন্তান নেন। না হলে হিন্দুদের ঘর দেখভাল করার কেউ থাকবে না।’
এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর রাজ্যের জনসংখ্যা-প্রবণতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হিমন্ত শর্মা বলেন, ২০২৭ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলমানদের জনসংখ্যা ৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তার দাবি, তিনি যখন অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)-এর রাজনীতি শুরু করেন, তখন তাদের জনসংখ্যা ছিল ২১ শতাংশ— যা ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ শতাংশে।
হিমন্ত শর্মা বলেন, ‘তাদের জনসংখ্যা ৪০ শতাংশের ওপরে চলে যাবে। দিন বেশি দূরে নয়— ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবে, অসমীয়াদের জনসংখ্যা ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে’। তিনি আরও দাবি করেন, ‘ওরা (বাংলাদেশ) প্রায়ই বলে, উত্তর-পূর্ব ভারত আলাদা করে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। এর জন্য যুদ্ধ করার দরকার নেই। তাদের জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ পেরোলে তা আপনা-আপনি হয়ে যাবে।’
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি কংগ্রেসের এক মুখপাত্রের বক্তব্যেরও উল্লেখ করেন— যেখানে মুসলমানদের জন্য ৪৮টি আসন সংরক্ষণের দাবি তোলা হয়েছিল। হিমন্ত শর্মার মন্তব্য, এ বিষয়ে কংগ্রেসের ভেতর থেকে কোনও আপত্তি আসেনি। তিনি বলেন, ‘বিজেপি দাবি তোলে— অসমীয়াদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হোক, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। কিন্তু কংগ্রেস চায় মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ’। তার অভিযোগ, কংগ্রেস ওই মুখপাত্রকে বহিষ্কারও করেনি, কারণ ‘পুরো কংগ্রেসের ইকোসিস্টেমই তাদের ওপর নির্ভরশীল’।
এদিকে হিমন্ত শর্মার এই মন্তব্য আসামে জনসংখ্যা, পরিচয়, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন ইস্যুতে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ককে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ নিয়ে অতীতের বিতর্কের প্রেক্ষাপটে রাজ্যে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে, আর এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও রয়েছে মতভেদ।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com