২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার গণঅভুত্থানে হামলা ও দমন পীড়ন চালানোর মাষ্টারমাইন্ড ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা পরিষদের সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এম মোয়াজ্জেম ‘জয়বাংলা বাবুল’ নামে পরিচিত। রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর সংলগ্ন গ্রেটওয়াল ল্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড প্রকল্পসহ দেশের আবাসন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে এই মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে ওসি মজিবর রহমান জানান, ডেভিল হ্যান্ট ফেজ-২ অপারেশনের অংশ হিসেবে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ধরা পড়লেও অপরদিকে তার ঘনিষ্ঠ ২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার গণঅভুত্থানে হামলা ও দমন পীড়ন চালানোর মাষ্টারমাইন্ড মুল সহযোগী ও অর্থদাতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য (মূসক নীতি) জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার রয়েছেন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার বরিশালের বানাড়ীপাড়া, চাউলাকাঠি গ্রামে যুবক বয়স থেকেই লালন করেন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী প্রবৃত্তি। আওয়ামীলীগের নেতা শেখ হাসিনা পরিষদের সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এম মোয়াজ্জেম এর সাথে জড়িয়ে বেপড়োয়া হয়ে ওঠেন তিনি। অর্থ ও পেশিশক্তির রাজস্ব বোর্ডে ‘দুর্নীতির করে বাগিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। নানা অপকর্মে জড়িত জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের শেষ নেই।
রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরকারের রাজস্ব কর ফাঁকি দিয়ে বনে গেছেন অবৈধ হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি। আওয়ামী লীগে দোসর হওয়ায় রয়েছে বিশাল এক অদৃশ্য শক্তি, জানা গেছে, শেখ হাসিনা পরিষদের সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এম মোয়াজ্জেম ‘জয়বাংলা বাবুল’ নামে পরিচিত এই প্রভাবশালী নেতাকে অর্থ যোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের সময় টিকে ছিলেন। বর্তমানে ৫ আগস্টের পর দেশ স্বাধীন হলেও এই আওয়ামী লীগের দোসর এখনো আওয়ামী লীগকে পূর্ণবাসন করার লক্ষ্যে ও অর্থ যোগান দিতে বহাল তবিয়াতে ব্যারিষ্টার পরিচয় দিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকতে মরিয়া এই জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার গত বছর জুলাই আগষ্ট গনঅভ্যুথনের সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বানচাল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত। জানা যায় শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর থেকে এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের তার নিজ অর্থায়নে আশ্রয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী আটক হয়েছেন তাদেরও নিয়মিত বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ দিয়ে ফিরিয়ে আনার চালাচ্ছেন পায়তারা।
কে এই জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার?
জাহাঙ্গীর হোসেনের জন্মস্থান বরিশালের বানাড়ীপাড়া, চাউলাকাঠি গ্রামে। পাঁচ ভাই-পাঁচ বোনদের সবার বড় তিনি। প্রথম জীবনে তিনি চাকুরী শুরু করেন সিলেটের চা বাগানে। এরপর চাকুরী নেন ব্যাংকে। তারপর বিসিএস প্রশাসন। আবার ক্যাডার চেঞ্জ করে কাষ্টমসে।
দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন তিনি । দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করাও যে কারো কারো জীবন আলাদীনের চেরাগের সমতুল্য সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে এই জাহাঙ্গীর।
বিয়ে করেছেন এসএসসি পড়ার সময়ই। এক ছেলে এক মেয়ে তাদের। ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীর নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন অনেক অবৈধ সম্পত্তি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে একাধিক বাড়ি, প্লট ও ফ্লাট এছাড়াও নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। কাস্টমসে চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া রাজস্ব আহরনের টাকা সরকারী কোষাগারে রাখার চেয়ে তার নিজ কোষাগারেই রাখতেন বেশী।
যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে জাহাঙ্গীর হোসেনের সখ্যতা গড়ে ওঠে:
বানাড়ীপাড়ায় ব্যাবসায়ী গোলন্দাজ ওরফে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেনকে একশত কোটি টাকা দিয়ে তার ব্যাবসায়ীক পার্টনার হয়েছেন, এবং তার হাত ধরেই জড়িয়েছেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেমের ব্যাংক-বীমায় রয়েছে তার বিশাল বিনিয়োগ। কথিত আছে এই ব্যবসায়িক বিরোধেই তিনি ২২ মার্চ ২০১৫ সোমবার রাজধানীর বনানীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন ।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা পরিষদের সভাপতি এবং শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এই জাহাঙ্গীর । রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর সংলগ্ন গ্রেটওয়াল ল্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড প্রকল্পসহ দেশের আবাসন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম এবং জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ।
নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ থেকে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন বা ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ই-বিআইএন) চালু করা হয়। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৮টি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, এর বড় একটি অংশই মূলত ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন নিয়েছে।
জানা গেছে, ওই সময় অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর আগে ও পরে এই প্রক্রিয়ায় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন মূসক নীতি সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন (অব.), ভ্যাট পলিসি সদস্য।
ভ্যাট অনলাইন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও মানসম্মত করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক দেখভালের দায়িত্বও ছিল তাদের ওপর। কিন্তু বাস্তবে এই প্রক্রিয়াটিতে কোনো ফল আসেনি।
ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুল ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুল তথ্য, আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) ও ইআরসি (এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) না থাকলেও সেগুলোর বানোয়াট তথ্য দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছে অনেকে। আবার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট প্ল্যান্ট না থাকলেও কেউ কেউ নিবন্ধিত হয়েছে ম্যানুফ্যাকচার হিসেবে। জানা গেছে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে শত কোটি টাকা লুফে নেন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রাজস্ব আহরনের টাকা সরকারী কোষাগারে রাখার চেয়ে নিজ কোষাগারেই রাখতেন বেশী।
ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত, ১-২-২০১৮ তারিখে তিনি অবসর গ্রহন করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যেসবকর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট ম্যাসাকারে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত মতে, শেষ পর্যন্ত তদন্তে কারও কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যেসকল সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে:
২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার গণঅভুত্থানে হামলা ও দমন পীড়ন চালানোর মাষ্টারমাইন্ড, ফ্যাসিষ্ট এর দোসর, অবৈধ অর্থ লেনদেন, আমদানি- রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুবিধার বিনিময়ে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ঘুষ গ্রহণ, হঠাৎ বাজেয়াপ্তকৃত মালামালের মুক্তিপণ আদায়, নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীর জন্য ভ্যাট ও কাস্টম ফাঁকি, কাগজপত্রে বৈধ দেখানোর নামে জালিয়াতি, প্রভাব খাটিয়ে লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ, সরকারি দায়িত্বের সুযোগকে ব্যবহার করে বেনামী বা অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন, সহকর্মী ও তদারক কর্মকর্তাদের উপর ভয়ভীতি সৃষ্টি, এবং সরকারি তথ্য বা নথি নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালীদের কাছে হস্তান্তর।
জাহাঙ্গীরকে আইনের আওতায় আনলে বেরিয়ে আসবে সকল অপকর্ম ও অবৈধ সম্পদের তথ্য।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com