রাঙ্গামাটি:- অপরিকল্পিত বন উজাড়ের কারণে খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে পাহাড়ের বন্য হাতিরা। তাই খাবারের খোঁজে বন্য হাতির দল প্রায়ই চলে আসছে লোকালয়ে। নষ্ট করছে ফসলের ক্ষেত, হামলা চালাচ্ছে বসতবাড়িতে, রাস্তা-ঘাটে, আক্রমণ করছে মানুষের উপর। মানুষও পাল্টা আক্রমণ করছে হাতির পালের ওপর। গত দেড় দশকে নানা কারণে ১৩টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে হাতির আক্রমণে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতির বিচরণ অন্যতম। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে হাতির বিচরণ বেশি। কিন্তু বনাঞ্চলের এ হাতি অনেকটাই সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। একের পর এক নিধনের শিকার হচ্ছে বিপন্ন এই প্রাণী।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড়ে পাদদেশে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ এবং বসতি স্থাপনের কারণে দিনদিন বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। যে কারণে বনে খাদ্য সংকট, আবাসস্থল ও নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র ধ্বংস এবং শিকারিদের হত্যার কারণে রাঙ্গামাটিতে হাতির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
রাঙ্গামাটি বনবিভাগ ও একাধিক তথ্যসূত্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যহাতির আক্রমণে ২০১১ সালে এক জন, ২০১৩ সালে এক জন, ২০১৪ সালে তিন জন, ২০১৫ সালে ছয় জন, ২০১৬ সালে দুই জন, ২০১৭ সালে তিন জন, ২০১৯ সালে দুই জন, ২০২০ সালে চার জন, ২০২১ সালে তিন জন, ২০২২ সালে দুই জন, ২০২৩ সালে পাঁচ জন, ২০২৪ সালে দুই জন ও ২০২৫ এক জনের মৃত্যু হয়।
আরো বলা হয়, ২০১২ সালের ৮ জুন কর্ণফুলী রেঞ্জে প্রসবকালীন একটি মা হাতি মারা যায়। ২০১৩ সালে একটি, ২০১৪ সালে গুলিতে একটি, ২০১৫ সালে বৈদ্যুতিক তারে দুইটি, ২০১৬ সালে বৈদ্যুতিক তারে মা হাতি, ২০১৭ সালে একটি, ২০২১ সালে একটি, ২০২৩ সালে দুইটি হাতির মৃত্যু হয়েছিলো। এছাড়া ২০২৪ সালে পুঁতে রাখা অবস্থায় মৃত হাতির হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। ২০২৫ সালে শাবকসহ বুনো হাতি মুত্যু হয়। একই বছর কাপ্তাই হ্রদে পড়ে নয় মাস বয়সী হাতি শাবকের মৃত্যু হয়েছে।
পরিবেশবাদীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বন উজাড়ের কারণে খাদ্য সংকট এবং হাতির চলাচলের করিডোরে মানুষের উপস্থিতি ও বসতি গড়ে তোলায় হাতি-মানুষের দ্বন্ধ বাড়ছে। এ দ্বন্ধের কারণে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন হাতির আক্রমণে। হাতিও মানুষ দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতির নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বন বিভাগের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
রাঙ্গামাটি ঝুম নিয়ন্ত্রণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগের উদ্যোগে দুর্লভ প্রজাতির হাজার-হাজার চারা রোপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সফল ভাবে করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতির নিরাপত্তা করিডোরের সংখ্যা আরও বাড়বে, পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকবে। তিনি বলেন, হাতি কোন ফসল খেয়ে ফেললে কিংবা বসত ঘর ভেঙ্গে দিলে মানুষ যেন হাতির উপর আক্রমণ না করে সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থদের নিয়ম মেনে আবেদন করলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রধান করা হবে জানান তিনি।ইত্তেফাক অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com