রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাজার ফান্ডের আওতাধীন বন্দোবস্তিকৃত স্থায়ী মালিকানাধীন জমি হস্তান্তর এবং জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা কর্তৃক রেজিস্ট্রি সম্পাদনের বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছ হতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না এলে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটির বাজারফান্ড বাসী অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে মানব বন্ধন, শাট ডাউন, হরতালসহ কঠোর হতে কঠোরতর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
আজ সকালে রাঙ্গামাটি শহরে রাঙ্গামাটি বাজার ফান্ড ভূমি অধিবার সংরক্ষণ কমিট কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী করা হয়।
সাংবাদিক সন্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি বাজার ফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির। এসময় সংগঠনটির যুগ্ন আহবায়ক মুজিবুল হক মুজিব,আব্দুল কুদ্দুছ,দুপ্রক’র সভাপতি ওমর ফারুক, রাঙ্গামাটি চেম্বারের পরিচালক দীল বাহাদুর, জহির উদ্দিন চৌধুরী, জসিম উদ্দিন, রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অটোরিকসা চালক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আবুল কালাম, কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা লোকমান হোসেন, করাতকল সমিতির সভাপতি মমতাজ মিয়া, ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি হাসমত উল্লাহ, তবলছড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল করিম, বনরুপা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, ব্যবসায়ী নেতা কামাল হোসেন, বরুন রায়সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় Rules of the Chittagong Hill Tracts এর Rule 12 ও 12(A) তে বন্ধকী দলিলের রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এ ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের উপর ন্যস্ত। কিন্তু ২০১৯ সাল হতে রাঙ্গামাটির বাজারফান্ডের আওতাভুক্ত জমি রেজিস্ট্রেশন অফিসার তথা জেলা প্রশাসক কর্তৃক বাজারফান্ডভুক্ত এলাকার যে কোন ধরণের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করছেন না। ফলে জমি বন্ধকী কার্যক্রম কিংবা হস্তান্তর স্থবির হয়ে পড়েছে। আর এর গভীর প্রভাব পড়ছে বাজারফান্ডভুক্ত এলাকার ব্যবসায়ী/আবাসিক জায়গার মালিকগণের উপর। তাঁরা দীর্ঘদিন যাবত তাদের নিজস্ব বন্দোবস্তু/খরিদ/দানকৃত মূলে প্রাপ্ত জমি বন্ধক রেখে আর ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন না। এটি সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট ও গুরুতর লঙ্ঘন যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং বিলোপের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাঙ্গামাটির বাজারফান্ডের আওতাভূক্ত নাগরিকগণ মৌলিক অধিকার ভোগ করা থেকে চূড়ান্তভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর জেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও এর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
অথচ ১৯৭২ সনের Board of Revenue Bangladesh এর Memo no. 244-B.R/vi-1-10/71, CHT of 19.8.1972 মূলে The Chittagong Hill Tracts Regulation 1900 এর অধীনে প্রণীত Rules of the Administration of Chittagong Hill Tracts ৩৪ ধারার (আই), (জে), (এন) এবং বিধি—১২(এ) অনুযায়ী বাজার ফান্ডের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের জন্য অর্পিত ক্ষমতাবলে বাজারফান্ড প্রশাসক বাজারফান্ড এলাকার জমি বন্দোবস্ত প্রদানের এখতিয়ারসম্পন্ন। এ ক্ষমতাবলেই জেলা প্রশাসকগণ ১৯৭২ সাল হতে বিভিন্ন সময় বাজারফান্ড প্রশাসক হিসেবে বাজারফান্ড এলাকার জমি বন্দোবস্ত প্রদান, জমা ভাগ, বন্ধকী অনুমতি প্রদান ও তৌজিভুক্তকরণ ইত্যাদি কার্যাদি সম্পাদন করে এসেছেন।
০১. সুতরাং বাস্তবে এ জেলার এসব জমির প্রকৃতি লীজ দেওয়া নয়, বরং বন্দোবস্তকৃত জমি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জেলা প্রশাসকগণই বাজারফান্ড প্রশাসকের দায়িত্বে থেকে স্বয়ং উক্ত জমির বন্দোবস্ত প্রদান করেছেন।
০২. ১৯৭২ সাল হতে অতীতে যখন জেলা প্রশাসক বাজারফান্ড প্রশাসক ছিলেন, তখন তাঁর অনুমোদনে এমন অনেক বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, এরকম অনেক রেকর্ডপত্র দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদ্যমান।
০৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ১৯০০(১) এর ১৯০০ ক্ষমতাবলে বিগত ১৬.০৬.১৯৬৫ তারিখের ৮৫৩—বি নং স্মারকের আদেশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আই.এম.এস রহমান রাঙ্গামাটির ১০৪ নং ঝগড়াবিল মৌজার সুনির্দিষ্টকৃত এলাকা এবং ১০২ নং রাঙ্গাপানি মৌজার সুনির্দিষ্টকৃত এলাকা বাজারফান্ড এলাকা হিসেবে পৃথক এলাকা ঘোষনা করেন। সুতরাং রাঙ্গামাটি বাজার ফান্ডের জায়গাসমূহ মৌজা হতে অধিকৃত এবং অধিবাসীদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্দ্যোবস্তিকৃত। এখানে লীজকৃত কোন জায়গা নেই।
০৪. ঝগড়াবিল ও রাঙ্গাপানি মৌজার জায়গা বাজারফান্ড প্রশাসনের আওতাভূক্ত করার আদেশের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সনের রীট পিটিশন ১২৬০ ও ১২৬১ দায়ের করলে মহামান্য হাই কোর্ট ০৯/০৮/১৯৯৩ খ্রি. তারিখে তা Summarily reject করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিমালা ৭ নম্বর বিধি অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমি বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতা ন্যস্ত আছে বলে জানান। তাছাড়া ২৫ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে য়াওয়ায় বাজার ফান্ডের খতিয়ান সংশোধন করে মৌজায় স্থানান্তরের বিষয়েও অপারগতা প্রকাশ করেন।
০৫। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৮৭২, তারিখ: ০১.১২.১৯৯৭ মূলে প্রেরিত পত্রের ৩.৩ অনুচ্ছেদে মিউটেশন/নামজারী এবং নতুন বন্দোবস্তসহ নামজারীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রেজিষ্ট্রেশন বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ১৯০০ (প্রচলিত আইন) অনুযায়ী জেলা প্রশাসককে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
০৬. বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের নিকট জেলা প্রশাসক, রাঙ্গামাটি স্মারক নং ০৫.৪২.৮৪০০.৩০৬.০১.০১৭.২৫.২১০, তারিখ ১১ আগষ্ট, ২০২৫ খ্রি. পত্রমূলে ঐ একই মতামত দেন। ১৯৩৭ সালের বাজার ফান্ড বিধিমালার বিধি ২৭ ও Form —১৭ এর ৮ নং ক্রমিকে বাজার ফান্ড প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে বন্দ্যোবস্তিকৃত প্লট এবং এমনকি ইজারাকৃত প্লট বা প্লটের অংশ সাব লীজ, হস্তান্তর বা বন্ধক দেয়ার বিধান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানাননো হয় ১৯৮৯ সালে এসে কেবল সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ি প্রশাসক হিসেবে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। কাজেই, প্রশাসক পরিবর্তনের কারণে কার্যক্রম স্থগিত থাকার যৌক্তিকতা নেই। বিধিগত সমস্যা থাকলে লীজকৃত জমিতে বন্দকী দলিল রেজিস্ট্রেশন করা না—ও যেতে পারে, তবে বন্দোবদ্ধকৃত জমিতে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত ও আইনানুগ। উল্লেখ্য যে, ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানের এবং প্রদত্ত ঋণ আদায়ের সম্মত থাকলে বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কোন যুক্তিকতা নেই।
অতএব, বাজারফান্ড এলাকার এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে পূর্বের ন্যায় এ জেলার বাজার ফান্ড এলাকার আওতাভুক্ত বন্দোবস্তকৃত জমির হস্তান্তর ও বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আপনাদের মাধ্যমে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের মৌলিক অধিকারের ন্যায্য এ দাবিতে বিগত ৫ মাস যাবত রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মহোদয় সহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের কাছে আবেদন—নিবেদন, আলাপ—আলোচনা, স্মারকলিপি প্রদানসহ এ্যডভোকেসির সকল টুলস ব্যবহার করেছি। আপনাদের মাধ্যমে শেষবারের মতো মিডিয়া এ্যডভোকেসি করছি। আশাকরি কর্তৃপক্ষ উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন, যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ এবং সুপারিশ বিবেচনাক্রমে বিষয়টি আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিষ্পত্তি করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মানুষের রুটি—রুজি ও স্থাবর সম্পত্তির মতো মৌলিক একটি বিষয়ে যুগ যুগ ধরে আইনসিদ্ধভাবে চলমান একটি নিয়মিত ও সাংবিধানিক কার্যক্রমকে থামিয়ে দেয়ার ফলে আমাদের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, ভোগান্তি কার্যকরভাবে আমলে নেবেন। ফ্যাসিস্ট পরবতীর্ ৫ আগষ্টের রূপান্তরকালীন নতুন সময় ও প্রেক্ষাপটকেও বিবেচনা করবেন। ফ্যাসিবাদের সময়ে গৃহীত স্বেচ্ছাচারী ও মৌলিক এবং মানবাধিকার পরিপন্থী, এলাকার অর্থনৈতিক ও ব্যবসা—বাণিজ্যের প্রতি চূড়ান্তভাবে অন্তরায়মূলক সিদ্ধান্ত আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছ হতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না এলে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটির বাজারফান্ড বাসী অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এর পরপরই একর পর এক মানব বন্ধন, শাট ডাউন, হরতালসহ কঠোর হতে কঠোরতর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারী প্রদান করা হয়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com