
ডেস্ক রির্পোট:- সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে পরিচিতি পাওয়া রাউজানে অন্তত ৭টি বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা উপজেলাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করছে। মাদক, বালু ও মাটির ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। যেখান থেকে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এক বাহিনীর ব্যবসায় আরেক বাহিনী মাথা ঘামালেই ঘটছে সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা। এক সময় আওয়ামী লীগ দলীয় সন্ত্রাসীরা রাউজানের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন বিএনপির নামধারী সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
বাহিনীগুলোর মধ্যে উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় সক্রিয় রয়েছে ফজল হক বাহিনী, জসিম বাহিনী, কামাল বাহিনী ও জানে আলম বাহিনী। উপজেলার পশ্চিম গুজরায় সক্রিয় রয়েছে রমজান বাহিনী, বাগোয়ান ইউনিয়নে মামুন বাহিনী ও ভূপেশ বাহিনী। এছাড়া পৌরসভাসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে সাতটি বাহিনীর উপ-বাহিনী গড়ে উঠেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৫ মাসে রাউজানে ১৭টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টিই রাজনৈতিক। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অন্তত ৬৫টি সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সব ঘটনায় ব্যবহার হয়েছে হালকা ও ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। এসব ঘটনায় ১২টি মামলায় অন্তত ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাহিনী প্রধানের নাম নেই মামলার এজাহারে। এছাড়া এ পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেফতার করলেও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, বাহিনী প্রধানরা বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতার অনুসারী হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেন। এ কারণে প্রশাসনও তাদের গ্রেফতারে অনেকটা নিরূপায়।
সবশেষ শনিবার দুপুরে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে জঙ্গলে ওতপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা যুবদল কর্মী আলমগীরকে প্রকাশ্যে গুলি করে। এর ১৮ দিন আগে মানিক নামে এক ব্যবসায়ীকে রাউজান থেকে শহরে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের কাছে গাড়ি থামিয়ে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলও রাউজানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোথায় কোন বাহিনী রয়েছে তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে উপজেলাটির ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় সাড়ে তিন ৩ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকেন। অজানা ভয়ে সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফেরেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করছেন। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগদলীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী ক্যাডারদের দাপটে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘর ছাড়া থাকতেন। ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত সন্ত্রাসীরা খুনোখুনিতে মেতে ওঠে। তবে রাউজানে সব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য বক্তৃতা-বিবৃতিতে পরস্পরকে দায়ী করে আসছেন তারা।
খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, উদ্ধার হচ্ছে না আগ্নেয়াস্ত্র : প্রায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। এর একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানে প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে গত বছরের ২৮ আগস্ট। ওই দিন বিকালে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নানকে। ১ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ-সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে মো. ইউসুফ মিয়া নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ নভেম্বর নিখোঁজের ৩ দিনের মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় হাফেজ মাওলানা আবু তাহের নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নগরীর খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসান নামে এক যুবলীগ কর্মীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। ১৫ মার্চ ইফতার মাহফিল নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের মারধর ও ছুরিকাঘাতে খুন হন কমর উদ্দিন জিতু নামে এক যুবদল কর্মী। ২১ মার্চ পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হোয়ারাপাড়া থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মো. রুবেল নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৯ এপ্রিল রাতে খুন হন যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহ (৩৬)। ২২ এপ্রিল রাউজান উপজেলা সদরের কাছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গাজিপাড়া গ্রামে খুন হন ইব্রাহিম নামের এক যুবদল কর্মী।
এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, রাউজানে সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে গুগল ম্যাপে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। তা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যুগান্তর
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com