ডেস্ক রির্পোট:- দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৪ লাখের বেশি শিক্ষক রয়েছেন। নির্বাচনে অন্যান্যদের পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টগণ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ভোটে পোলিং এজেন্টের দায়িত্বে থাকেন তারা। বিষয়টি অনুধাবন করে আওয়ামী সরকার পতনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জামায়াত। বর্তমানে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ শিক্ষা সচিবের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েই এই মন্ত্রণালয়ে জামায়াতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোক বসিয়ে পুরো শিক্ষাখাতকে নিয়ন্ত্রণে নেয় জামায়াত। এর পর সচিব বদলালেও শিক্ষার সবকটি প্রতিষ্ঠানে জামায়াতবিরোধীদের সরিয়ে পুনর্বাসন করা হয় জামায়াতপন্থীদের। বাদ যায়নি সরকারি আলিয়া মাদরাসাগুলোও সর্বশেষ এসব মাদরাসায় জামায়াতপন্থী ২০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন সিনিয়র সচিবের হাত ধরেই মূলত শিক্ষাখাতকে জামায়াতিকরণে পরিণত করার কার্যক্রম শুরু হয়। তার সময়ে মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন অধিদফতর, বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর, প্রভোস্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জামায়াতপন্থিদের বেছে বেছে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, বোর্ড, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ মাদরাসা বিভাগের সব দফতর ও প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতের আখড়ায় পরিণত করেছেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা সেক্টরকে নিজেদের মতো করে সাজাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তারাই অংশ হিসেবে সবার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণে নেয় দলটি। যেখানে রয়েছে ১৪ লাখের বেশি শিক্ষক, তারাই আগামী নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জামায়াত। আর শিক্ষকদের নিজেদের পক্ষে রাখতে জামায়াতপন্থী শিক্ষক নেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজীকে দিয়ে ভাতাবৃদ্ধির আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা ও দাবি আদায়ের নামে নাটক মঞ্চস্থ করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। যদিও শিক্ষকদের কাক্সিক্ষত ভাতা বৃদ্ধির পরিবর্তে শান্ত¦না নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাদের। তবে এই আন্দোলনে জামায়াত আজিজীকে ‘হিরো’ বানাতে গিয়ে সর্বশক্তিই নিয়োগ করেছে। আর শিক্ষকদের উস্কে দেয়া হয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে।
মাদরাসা শিক্ষার বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠান দখলের তথ্য জানিয়ে জামায়াতের এসব দখলের বিরুদ্ধে থাকা শিক্ষকরা বলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর ও মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এসব দফতরসমূহ দেশের আলিয়া মাদরাসা, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে উল্লিখিত দফতরসমূহ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের দ্বারা দখল হয়ে আছে এবং তারা নিজেদের মতাদর্শ বস্তবায়নের জন্য মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভুল আখ্যা দিয়ে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনসহ শিক্ষার্থীদের আকিদা বিনষ্টের চক্রান্ত করছে। এত্থেকে পরিত্রাণের জন্য অতিদ্রুত এসব দফতরকে জামায়াতের কবল থেকে মুক্ত করার দাবি জানান। তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। একই সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিদর্শকসহ উপরস্থ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পদের নেতা। এছাড়াও সেকশন অফিসার, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকসহ অন্যান্য পদে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের মধ্যে জামায়াত ও শিবির মতাদর্শের ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুুবিধা দেয়া হচ্ছে। দেশে যেসব মাদরাসা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা পরিচালনায় রয়েছে, সেখানে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাদরাসাগুলোর উচ্চস্তরের কামিল শ্রেণিতে বিভিন্ন বিভাগ অনুমোদনের মহোৎসব চলছে।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সব কমিটি উপ-কমিটিতে মাদরাসা প্রধানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়া হয়, সে সব স্তরে শতভাগ জামায়াতিকরণ করা হয়েছে। মাদরাসাগুলো পরিচালনার জন্য দেশের সব মাদরাসার গভর্নিং বডিতে ব্যাপকভাবে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোতে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ একজন কট্টর সালাফি মতাদর্শের যা জামায়াতে ইসলামীর আদর্শের সাদৃশ, এ ছাড়াও রেজিস্ট্র্রার, উপ-রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সব কর্মকর্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো না কোনো পদভুক্ত নেতা। বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদসহ সব কমিটি, উপ-কমিটিতে জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামী থেকে উঠে এসেছে।
মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ও ভাইস-প্রিন্সিপাল জামায়াত নেতা, তাছাড়া বিভিন্নভাবে দেশের একমাত্র মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শিক্ষকদের জাময়াতিকরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে তিনটি সরকারি আলীয়া মাদরাসা রয়েছে। বিগত এক বছর যাবৎ এই তিনটি মাদরাসায় যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তারা সবাই জামায়াতের রোকন।
আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ছত্রছায়ায় সরকারি অর্থ ব্যায় করে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদরাসা শিক্ষকদের একত্রিত করে সভা-সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের নামে বিগত এক বছর যাবৎ জামায়াতের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির শিক্ষা-বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে জামায়াতের অনেকে আওয়ামী লীগে গোপনে-চুপেচাপে ছিল, সুবিধা গ্রহণ করেছে, নানা নাম ধারণ করেছিল। এখন তারা ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করছে। সরকার ইতোমধ্যে তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদেরকে প্রশ্রয় নিয়েছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দিয়েছে, দিচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত পুরোপুরি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com