১৫ দিনের মধ্যে প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ আ.লীগ ৩৪ জন সচিব * জামায়াতপন্থি ২৯ জন সচিব * বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা পাঁচজন * সুবিধাভোগী ১০ জন সচিব প্রশাসনে
ডেস্ক রির্পোট:- অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রায় ১৫ মাস হয়ে গেছে। এখনো প্রশাসনকে দল নিরপেক্ষ এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার অলিগার্কমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের দিকে নানা অভিযোগ তুলছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ‘চিহ্নিত দলবাজ আমলাদের’ তালিকা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে দলবাজ আমলাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচনের লক্ষ্যে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগেই প্রশাসনযন্ত্রকে দলনিরপেক্ষ করার পরিকল্পনা করেন। সে জন্যই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রশাসনকে দল নিরপেক্ষ করতে জনপ্রশাসন সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, গত ১৭ বছর ধরে প্রশাসনের বর্তমান পরিস্থিতি চলছে। জনপ্রশাসনকে দলীয়করণের খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালে তা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। ফলে এখন নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে নতুন উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তবে সরকারকে সতর্ক হতে হবে যাতে ‘অতি উৎসাহী’ পদক্ষেপে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ৭২ জন কর্মকর্তা বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগপন্থি ৩৪ জন সচিব, জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা ২৯ জন এবং বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা পাঁচ জন এবং সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ১০ জন সচিব রয়েছেন। প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এনসিপিসহ অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বিএনপি ও জামায়াতের হয়ে। প্রশাসনের বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নের মতো বিষয়গুলো জামায়াতের রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হচ্ছে। জামায়াতের পক্ষ হয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মূল ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনে থাকার ফ্যাসিবাদি সুবিধাভোগী এবং চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করে প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যেকোনো সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভগ সচিবকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। আজ রোববার থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফ্যাসিবাদি সুবিধাভোগী এবং চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া আমলাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নৌ পরিবহন সচিবকে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হয়েছে। আজ না হলে চলতি সপ্তাহে অনেক সচিবের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হবে। সংসদ নির্বাচনের আগে বাধ্যতামূলক অবসরের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে, বিগত সরকারের নিয়োগ পাওয়া সচিবদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। চলতি সপ্তাহে প্রশাসনে সচিবসহ বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর ফলে প্রশাসনে তাদের দাপট কমছে। রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার এ প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে এবার প্রশাসনের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পরে প্রধান উপদেষ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে ডেকে আগামী ১৫দিনের মধ্যে প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনাতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র। ইতিমধ্যে নতুন সচিব নিয়োগ দিতে দুইটি ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে তাদের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচিব বলেন, গত সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা জনপ্রশাসন সচিবকে ডেকে নিয়ে প্রশাসনের ফ্যাসিস্ট সরকারে আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বদলির নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সঠিক নয় বলে মনে করছেন আমলারা। তারা অভিযোগ করে বলেন, এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কারণে তাকে প্রত্যহার করা হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনে চলছে অস্থিরতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও যারা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না বা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েজন সিনিয়র সচিব ও সচিব বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) থাকা অবস্থায় তারা ‘সরকারবিরোধী গোপন বৈঠক,’ ‘তথ্য ফাঁস’ ও ‘রাজনৈতিক তৎপরতা’ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন অভিযোগ উঠে আসে। এ প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কয়েকজন সচিব ও সিনিয়র সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে বাধ্যতামূলক অবসরের পরবর্তী তালিকায় আরো সচিবদের নাম থাকতে পারে। ইতিমধ্যে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিবদের আমলনামা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। তাদের কর্মকা-ের ওপর সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাদের নামের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কেউ সিনিয়র সচিব ও সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে প্রশাসনের বড় একটি পক্ষ তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর জন্য সরকারের ওপর জোর চাপ সৃষ্টি করছে। আবার অন্য একটি পক্ষ চাইছে- পেশাদারত্ব বজায় রেখে যদি তারা প্রশাসনে কাজ করেন, তাহলে অবসরের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিৎ। কারণ প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তার প্রয়োজন আবশ্যক রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার কোনটাই না রাখলে তখন সচিবদের অবসরের তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে। এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া। সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার এখন একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, কিছু কর্মকর্তা এখনো ক্ষমতাচ্যুত ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ‘রাজনৈতিক আদর্শে অনুগত’। তারা অফিসে নিষ্ক্রিয়, নীতি বাস্তবায়নে অনীহা এবং গোপনে অপতৎপরতায় লিপ্ত। এমন প্রমাণ পাওয়া কর্মকর্তাদের জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তবে চাকরির মেয়াদ ২৫ বছরের কম যাদের, তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে রাখা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি শুধু শাস্তিমূলক নয়, বরং বর্তমান প্রশাসনের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনাই এর উদ্দেশ্য। গত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৪৩ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। যাদের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছরের বেশি, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। কম হলে রাখা হচ্ছে ওএসডি অবস্থায়। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য যদি সত্যিই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তবে সমালোচকদের প্রশ্নও, জোরালো এই অবসরের তরঙ্গ কি শুধুই শুদ্ধি অভিযান, নাকি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রশাসনের পুনর্বিন্যাস? বলে মনে করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিলের দাবি : অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই ঘুরেফিরে নানা বিতর্কে সামনে আসছে আলোচিত এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম। এতে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিলে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হক, (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মো. মোখলেস উর রহমান, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিতে সংযুক্ত সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মমতাজ আহমেদ।
এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব জামায়াতের পক্ষে হয়ে প্রশাসন জামায়াতিকরণ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা গত ১৪ মাসে প্রশাসনে কি কি কাজ করেছে এবং কোন কোন কর্মকর্তা কি কি অনিয়ম ও দুনীতির সাথে জড়িত এবং ক্ষমতার প্রভাবে কি কাজ করছে তাদের বিষয়ও সরকার নজর রাখছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থি আমলারা : ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থি আমলারা হলেন, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নিবার্হী পরিচালক শরিফা খান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন, পরিবশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ নিয়ান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. ভায়েরুজ্জামান মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব) মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহনা পারভীন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমি উল আহসান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষনের সচিব সাঈদ মাহবুব খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার ও সমন্বয় সচিব জাহেদা পারভীন, সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) তাসলিমা কানিজ নাহিদা, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির (রেক্টর) ড. এ কে এম শাহাবুদ্দিন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব সিরাজুন নরু চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাইসার চৌধুরী। এসব আমলারা কাদের কাদের সাথে বৈঠক করেছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করছে কি না তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিবপদ থেকে প্রত্যহার করা হবে বলে জানা গেছে।
জামায়াতপন্থি আমলা : বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসার পর পর প্রশাসন পুরো দখলে নিয়েছে জামায়াতপন্থি আমলারা। ইতোমধ্যে গত দেড় বছরে প্রশাসনে বড় বড় ৩০টি মন্ত্রণালয়ের তাদের অনুসারী সচিব নিয়োগ নিয়েছেন এবং প্রশাসনে বড় ভূমিকা পালন করছেন। তারা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, এর আগে তিনি যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন তখন থেকে তিনি জামায়াতপন্থি আমলাদের নিয়োগ দিয়ে আসছেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব হওয়ার পরে তা ওপেন দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (সাবেক কৃষি মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর একান্ত সচিব) গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলোয়া আক্তার, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দীন, সেতু বিভাগ সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদ আলম সিয়াম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব উল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার কাযালয়ের সচিব মো. সাইফল্লাহ পান্না (কখনো জামায়াত ও কখনো বিএনপি এর আগে বিএনপির ক্ষমতা থাকার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন)। সচিব পদে থাকার এসব কর্মকর্তাদের অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা : প্রশাসনে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত হলেও নিয়োগ পাওয়ার পরে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মন্ত্রণালয়ে বিএনপির কোনো নেতা গেলে তাদের কাজ করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেন, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. নেয়ামত উল্লা ভূঁইয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সাহেল আহমেদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সংসদ সচিব কানিজ মওলা, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার। এসব কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনে সুবিধাভোগীরা : সুবিধাভোগী আমলারা হলেন, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বর্তমান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও শক্তি বিভাগ) ড. মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসনে ন্যস্ত থাকা মোহাম্মদ ইউসুফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পযর্টন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুল রহমান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো, মাসুদ রানা, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম (নিরপেক্ষ আমলা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের আমলে ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন), সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুবসহ বেশ কয়েকজন সচিব সুবিধাভোগী আমলা বলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পরিচিত রয়েছেন। এরকম যারা প্রশাসনে রয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
আলোচিত ৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর : বর্তমান সরকারের আমলে ওএসডি করা হলেও তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে আলোচিত নয় সচিবকে চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ করার পরে অবসরে দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি (গত সোমবার) ওএসডি থাকা নয় সচিব ও সিনিয়র সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com