ডেস্ক রির্পোট:- পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার নেপথ্যে ভারত। এই সমস্য জিইয়ে রেখে সময় সুযোগমতো তারা ব্যবহার করছে। এই এলাকার শান্তি রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা ও শান্তিচুক্তি বাতিল অথবা সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়াতে হবে। আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী, সেটেলার, সেটেলার বাঙালি শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিয়ে আলোচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ক্লাবের হেলমেট হলে ‘সমস্যা সংকুল পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষণ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সবেক বিভিন্ন পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও অন্যান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যার কেন্দ্রে, মূল সমস্যা তৈরি করা এবং এই সমস্যাকে জিইয়ে রাখা, সবকিছুর জন্য একটা মাত্র রাষ্ট্র দায়ী ভারত। বাকিরা হয়তো ছোটখাটো ভূমিকা রেখেছে। আমাদের সমস্যাটা হলো ভাসুরের নাম মুখে নিতে খুব লজ্জা করে।
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, মাছের জন্য যেমন পানি দরকার সেনাবাহিনীর জন্য তো জনসমর্থন দরকার। না হলে তো সে মুভ করতে পারবে না, সেই মুভের রাস্তাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু এরশাদ গুচ্ছগ্রাম ফর্মুলা নিয়ে আসছিলেন। গুচ্ছগ্রাম ফর্মুলা দিয়ে ভারতের হাতে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম তুলে দেওয়া হয়। কারণ গুচ্ছগ্রাম যে সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যে বাঙালিরা ছিল সেগুলোকে ক্লোজ করে রাস্তার দুই পাশে শরণার্থী ক্যাম্পে জায়গা দেওয়া হলো। বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়ে গেল। এবং যত ইন্টারন্যাশনাল সুযোগ-সুবিধা সব হলো চাকমাদের জন্য। মারমা, গারো, হাজং কারও জন্য কিচ্ছু নেই। আর বাঙালিরা তো মানুষই না। কোনো এনজিও বাঙালিদের পাশে কখনো দাঁড়ায়নি।
অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি দূর করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কেন ভারতকে বলে দেওয়া যায় না প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই কথা বলতে লজ্জা কিসের, আমাদের গণমাধ্যমের একটা অংশ তো সন্তু লারমার চামচ দিয়ে চিনি খায় আর ভারতের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা যেহেতু বাংলাদেশে জেঁকে বসেছে এই আধিপত্যবাদের সেবাদাসরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এবং এরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মূল পৃষ্ঠপোষক।
সভায় দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, আগ্রাসনটা কার কাছ থেকে আসছে? আগ্রাসনটা ভারতের কাছ থেকে। শান্তি বাহিনী তো তৈরি হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সময় কিন্তু তারা তো আক্রমণ করেনি বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালের আগ পর্যন্ত। তার মানে হচ্ছে ভারত বাংলাদেশে তার এগ্রেশন জিইয়ে রাখার জন্য একটা অস্ত্র হাতে রেখেছে। সেই অস্ত্র সময় সুযোগমতো তারা ব্যবহার করছে। যখন তাদের পছন্দের সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। সেই সময় তারা এই অস্ত্র অ্যাজ এ অফেন্সিভ হিসাবে ব্যবহার করবে। তার সঙ্গে কিন্তু একটা লোকাল গ্রুপ জড়িত আছে আমি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ তাদের কথা বলছি না আমাদের পলিটিশিয়ানদের মধ্যে একটা বড় পলিটিক্যাল ফোর্স এই ভারতীয় আগ্রাসনের সহযোগী। এবং তার মধ্যে অন্যতম সহযোগী ছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।
এর আগে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের শাসন ও শাসকদের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এখানে যে সমস্যা আছে এর সঙ্গে ভারত জড়িত। সমস্যার সমাধান হবে যদি আমরা দেশপ্রেম জারি রাখি। এছাড়াও বিদেশি গোয়েন্দাদের প্রলোভন ও জাল থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় সিএসডি সম্প্রতি জোট সমন্বয়ক থোয়াইং চিং মং শাক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বললেই মনে করি, চাকমা। সন্তু লারমার একটা বাহিনী ছিল- জেএসএস। জেএসএস থেকে আজ সাতটা দল তৈরি হয়েছে। এই দলগুলো তৈরির পেছনে কারণ কি? আমরা রাঙামাটি লিজ দিয়েছি চাকমাদের হাতে, বান্দরবানকে লিজ দিয়েছি মারমাদের হাতে, আর খাগড়াছড়ি লিজ দিয়েছি ত্রিপুরাদের হাতে। কিন্তু আমাদের বলা হয় উপজাতি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাত বছর ফ্লাইং করেছি। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা তখন ৪০০ ক্যাম্পে ফ্লাইং করেছি। সেই ক্যাম্পের সংখ্যা কোথায় নেমে এসেছে। আমি দেখেছি সশস্ত্র বাহিনীর যে ধরনের কমিটমেন্ট ছিল এখন সেই কমিটমেন্ট আছে কিনা আমি জানি না। আগে পাহাড়ের যে ইতিহাস আমাদের পড়ানো হতো সেই ইতিহাস প্রেক্ষাপট এখনো পড়ানো হয় কিনা এটা আমি জানি না। এগুলো দেখার বিষয় আছে।
রাওয়া চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪০০ জনের মতো শহীদ হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দীর্ঘদিনের, আজ কোনো নতুন সমস্যা নয়। আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, দেশের শত্রুদের চক্রান্ত, তারা করতেই থাকবে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু সেটা থেকে বাঁচার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আমাদের জাতীয় ঐক্য।
মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, পাহাড়িদের মধ্যে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। পাহাড়ে গুজব ছড়ায় ইউপিডিএস এবং পার্শ্ববর্তী দেশ। গণমাধ্যমে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। পাহাড়ে কিছু হলে না বুঝে না জেনে একদল বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিতে শুরু করেন। শান্তি চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এটা পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। এই সমস্যার সঙ্গে দেশের সবার একত্রিত হতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ বলেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে বাঙালিদের মধ্যে সেরকম কোনো নেতৃত্ব এখনো পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। এবারের ঘটনা, ২০১৭ সালেও ঘটেছিল। তখনো কিন্তু এক গুজবেই বহু ভাঙচুর, মারামারি হয়েছে। এই গুজবটা কারা ছড়ায়, আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইন্ধনে ইউপিডিএফ এবং ওখানকার সশস্ত্র গ্র“প নিজেরা এটা ছড়ায়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com