ডেস্ক রির্পোট:-ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের হামলায় একদিনেই আরও ৯১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে যুদ্ধ থামাতে যে ২১ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিতও প্রকাশ্যে এসেছে। একদিকে রক্তক্ষয়ী হামলা, অন্যদিকে শান্তির আলোচনার প্রচেষ্টা—গাজার পরিস্থিতি আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে বোমাবর্ষণ চালায়। এতে ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিরই ৪৮ জন বাসিন্দা প্রাণ হারান। হতাহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহত হন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করবেন না। অর্থাৎ, প্রতিদিন প্রায় একশো মানুষ মারা গেলেও যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ নেই। এ সময়েই ফাঁস হয় ট্রাম্পের ২১ দফার প্রস্তাব, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আলজাজিরার খবরে জানা যায়, ইসরায়েল মধ্য গাজার সারায়া এলাকায় বেসামরিক মানুষের ওপর সরাসরি বোমাবর্ষণ করেছে। গাজার প্রত্যেক দিন যেন মৃত্যু ও শোকের মিছিল বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও ইসরায়েলি নেতৃত্ব বরং আরও ‘বর্বরতা বাড়ানোর’ হুমকি দিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার আট মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই তিনি ২১ দফার একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। কয়েকদিন ধরে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও, সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল পুরো প্রস্তাবের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজাকে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে ইসরায়েল ধীরে ধীরে সেনা সরিয়ে নেবে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত-মৃত সব জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এর পর ইসরায়েল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, পাশাপাশি হাজারো আটক ব্যক্তি ও মৃতদেহ হস্তান্তর করবে।
এছাড়া হামাসের যোদ্ধাদের জন্য ‘ক্ষমা ও নিরাপদ প্রস্থান’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যারা সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেবে। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করবে এবং জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্টসহ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেবে। গাজার শাসনভার দেওয়া হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন টেকনোক্র্যাট সরকারের হাতে, যাকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান করা হবে।
প্রস্তাবে আরও রয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আধুনিক শহর নির্মাণের উদ্যোগ। গাজার মানুষের বাইরে চলে যাওয়ার স্বাধীনতা থাকবে, তবে মূলত তাদের উপত্যকায় থেকে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে উৎসাহিত করা হবে। শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না, বরং সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে। গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র, আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বাহিনী গঠন করা হবে, যারা নতুন পুলিশ বাহিনীও গড়ে তুলবে।
সবশেষে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা পুনর্গঠন সফল হলে ও ফিলিস্তিনি অথরিটির সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগ নেবে।
আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক নির্ধারিত আছে। সেখানেই হয়তো জানা যাবে, ইসরায়েল এই ২১ দফার প্রস্তাব মানবে কি না। যদিও নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভাষণে স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজায় হামলা অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা হয়তো যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে আছি।” তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com