প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম:- ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন ও অদৃশ্য শক্তির থাবা’ চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হলো। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত লেখার অবকাশ রাখি ইনশাল্লাহ। ফিরে যাচ্ছি মূল লেখায়। ২০২৫ সালের ১০ আগস্ট, রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভিডিও কলে অংশ নিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দেন ‘‘ইনশাআল্লাহ, খুব শিগগিরই আপনাদের সাথে সরাসরি দেখা হবে।’’ এই মন্তব্য শুধু একটি শুভেচ্ছা বার্তা নয়; এটি দলের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী পরিকল্পনা, নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তন এবং দেশের রাজনৈতিক মাঠে নতুন সমীকরণ গঠনের স্পষ্ট সংকেত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারি (২০২৬)-এর প্রথমার্ধে, এটি নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর’র মধ্যে, অর্থাৎ নির্বাচনের ঠিক আগে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুকূলে থাকলে তার (তারেক রহমান) দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, অতি শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপি’র জন্য বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করবে। একদিকে এটি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করবে, অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী প্রতীকী বার্তা পাঠাবে যে বিএনপি নির্বাচনকে ঘিরে দৃঢ়ভাবে মাঠে নামছে, এমনকি নেমেছে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দলের কৌশল নির্ধারণ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন, যা তার প্রত্যাবর্তনের পর আরও গতি পাবে। তার প্রত্যাবর্তনের দিন হবে ইতিহাসের স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন চলছে এক নিঃশব্দ কিন্তু গভীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধ রক্তাক্ত নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। এটি মূলত মেটিকুলাস ডিজাইন (গবঃরপঁষড়ঁং উবংরমহ) নামক এক সূক্ষ্ম কৌশলে নির্মিত। মেটিকুলাস ডিজাইনের বাস্তবায়নে অনেক গভীর থেকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় অদৃশ্য শক্তির ইশারায় শুরু হয়েছে। এর লক্ষ্য শুধু ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া। কিন্তু এসবের বড় বাধা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। সঙ্গতকারণেই বিএনপি নামক জনপ্রিয় দলের রাজনৈতিক সক্ষমতা ও সামাজিক ভিত্তিকে ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করা। সূক্ষ্ম যুদ্ধের মূল কারিগর হিসেবে আজ অনেক বিশ্লেষকই আঙুল তুলছেন অদৃশ্য শক্তির দিকে; ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রভাববলয়ে পরিচালিত শাসনব্যবস্থার দিকেও। এই পরিস্থিতি আকস্মিক নয় বরং সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি এক কৌশলের ফল, যেখানে সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে এমনভাবে, যার পেছনে কোনো এক ভয়ঙ্কর অদৃশ্য শক্তির থাবা অনুভূত হয়।
প্রকৃতপক্ষে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে সূক্ষ্ম খেলা চলছে- মানবিক করিডোর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ইস্যুসমূহকে কেন্দ্র করে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, রাজনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এক ধরনের চাপ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কখনো মানবিক করিডোরের নামে, কখনো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে, আবার কখনো সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে এজেন্টাভিত্তিক প্রচারণা চালিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এসব ইস্যুর কেন্দ্রবিন্দুতে ক্রমেই উঠে আসছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার, যার মাধ্যমে একটি বিকল্প ‘প্যারালাল পাওয়ার ন্যারেটিভ’ অর্থাৎ ‘ডিপ স্টেট’ দাঁড় করানো চেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতি বোঝেন না এমন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রনায়ক বানানোর প্রচেষ্টা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যখনই কোনো ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণ সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখনই অন্য একটি স্পর্শকাতর ইস্যু সামনে এনে দাঁড় করায় ড. ইউনূস সরকার। এটি একপ্রকার “ইস্যু-সুইচিং স্ট্র্যাটেজি’’। যেমন, মানবিক করিডোর নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সেন্টমার্টিন নিয়ে আলোচনা, এরপর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক তৈরি পোশাক খাতে আরোপিত অস্বাভাবিক ট্যারিফ। এটি একটি তথাকথিত ‘উড়সরহড় চৎবংংঁৎব ঞধপঃরপ’- যেখানে একটির পর একটি চাপ তৈরি করে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দুর্বল করা হয়। মূলত যেসব বিষয় আদতে দেশের ভেতরের সিদ্ধান্ত বা কৌশলগত প্রশ্ন, সেগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করে ‘বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র’ প্রমাণের এক অদৃশ্য চেষ্টা চলছে। আর এই প্রচেষ্টা যাদের মাধ্যমে হচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ড. ইউনূস, যিনি একদিকে বিদেশি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আস্থাভাজন, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভাজন টিকিয়ে রাখার এক “বিকল্প চেহারা’’। বলাবাহুল্য, আন্তর্জাতিক সংযোগ, দাতা সংস্থা ও কূটনীতিক মহলের প্রভাব ব্যবহার করে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার গোপন ষড়যন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার আরো একটি ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ ক্রিয়াশীল দেশের মধ্যে। যা জনপ্রিয় দল বিএনপি’র মাধ্যমেই মোকাবেলা করা সম্ভব। একারণেই যথাসময়ে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কালক্ষেপনে জনগণ ইউনূস সরকারের দূরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছে।
বহু আগেই তারেক রহমান সতর্ক করেছিলেন ‘‘আমাদেরকে অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।’’ তিনি বুঝেছিলেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে বিএনপি’র জন্য এই যুদ্ধ হবে বহুমুখী, রাজনৈতিক, কৌশলগত, তথ্যযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক লড়াই। এজন্য তিনি শুধু মাঠে আন্দোলন নয়, বরং তথ্যভিত্তিক কৌশল, প্রযুক্তি ব্যবহার, যুবসমাজের সম্পৃক্ততা এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি দলের ভেতরে মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলছেন, সাংগঠনিক ঐক্য বজায় রাখছেন এবং নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ভিত্তি শক্ত করছেন। তারেক রহমান উপলব্ধি করেন, আজকের রাজনীতিতে শুধু বক্তৃতা বা সমাবেশ নয়—ডিজিটাল প্রচারণা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্যবস্থাপনা এবং সুনির্দিষ্ট নীতি-প্রস্তাব অত্যন্ত জরুরি।
গুপ্ত রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ বারবার সামনে এসেছে। যেমন, গবঃরপঁষড়ঁং উবংরমহ-এর অংশ হিসেবে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, লিজেন্ডারি লিডার তারেক রহমান সর্বোপরি বিএনপি’কে নানাভাবে কলঙ্কিত করবার চেষ্টা করা হচ্ছে- তথ্য সন্ত্রাস ও সাইবার বুলিং-এর মাধ্যমে। সেখানে জনমত গঠন নয়, বিকৃতি চলছে। ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইন পোর্টাল পত্রিকা ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও বিএনপি নেতাদের হেয় ও চরিত্র হননের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিছু দিন আগে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কালের সবচেয়ে সৎ, নির্ভীক রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের ছবি পদদলিত করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে “অশ্রাব্য ভাষায়” স্লোগান দেওয়া হয়েছিল, কূটক্তি করা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া সম্বন্ধে। এই ঘটনাগুলো কেবলমাত্র রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি নয়, বরং জনপ্রিয় দল বিএনপি’র বিরুদ্ধে ড. ইউনূস ও অদৃশ্য শক্তির গভীর ষড়যন্ত্র এবং চরিত্র হননের পরিকল্পিত কৌশল।
বাংলাদেশ ভূখ-ে জিয়া পরিবারের জনপ্রিয়তা এক অনন্য ঘটনা। মাটি ও মানুষের মননসিদ্ধ ভালোবাসায় পরিবারটি সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের যোগ্যতায় সিক্ত। ১/১১-এর পর থেকে শুরু করে বিগত ১৯ বছর সরকারের সকল প্রোপাগান্ডার মেশিন এবং বক্তব্য বিবৃতির মধ্য দিয়ে অপপ্রচারের মধ্যেও জিয়া-খালেদা-তারেকের জনপ্রিয়তা সামান্যতম হ্রাস পায়নি। অর্থাৎ চরিত্র হননের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং হবে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার দল মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার, যুবসমাজকে দলে যুক্ত করার এবং নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে বদ্ধপরিকর। খবধফবৎ রং ড়হব যিড় শহড়ংি ঃযব ধিু, মড়বং ঃযব ধিু, ধহফ ংযড়ংি ঃযব ধিু (জন ম্যাক্সওয়েল)। তারেক রহমান ঠিক এরকম একজন নেতা। তিনি ও তার পরিবার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসন মোকাবেলা করেছিলেন অপরিমেয় ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সংগ্রামী চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে। ফ্যাসিবাদের গভীর সংকট অতিক্রম করে বর্তমান সংকটেও বিএনপির নেতৃত্বে আছেন তিনিই। সূক্ষ্ম অশুভ ডিজাইনের জবাবে তারেক রহমান সূক্ষ্ম শুভ নেতৃত্বে অটল। তিনি জানেন, আজকের লড়াই শুধু মাঠের বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ নয়। এখন প্রয়োজন তথ্যভিত্তিক আন্দোলন, মেরিটোক্রেসির প্রাধান্য, ডিজিটাল সংগঠনত্ব, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে দৃশ্যমানতা। বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেখানে সাহসের পাশাপাশি কৌশল ও প্রযুক্তির সমন্বয় আবশ্যক। আর সেটিই তিনি করে চলেছেন অবিরাম নিরন্তর।
গত ১৭ বছরে বিএনপির কঠিন সংকটে তারেক রহমানের দৃঢ়তা, সুচিন্তিত নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখনো ক্ষমতাকাঠামোর প্রতিটি স্তরে, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে তিনি দলের ঐক্য রক্ষার জন্য নিরলস কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি নানা বিভাজনকে পাশ কাটিয়ে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে এবং তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কর্মসূচি চালু রয়েছে। দলের আস্থাবান কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তার সাহসিক বক্তব্য ও বৈজ্ঞানিক কৌশল নিয়ে পদক্ষেপ বারবার প্রমাণ করেছে তারেক রহমানই দলের অপরিহার্য ও অদ্বিতীয়। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে নতুন চিন্তা, অভিনব কৌশলের উৎকর্ষ ঘটেছে এবং সংগঠনের অন্তর্নিহিত শক্তিকে আধুনিকায়নের দিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপি’তে প্রকৃত নেতৃত্ব বিকশিত হয়েছে। আমরা জানি, খবধফবৎংযরঢ় রং ঃযব ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ বহপড়ঁৎধমরহম ধহফ যবষঢ়রহম ড়ঃযবৎং ঃড় ড়িৎশ বহঃযঁংরধংঃরপধষষু ঃড়ধিৎফ ড়নলবপঃরাবং. (কবরঃয উধারং) অর্থাৎ ‘নেতৃত্ব হল উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে অন্যান্য লোকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসাহিত ও সাহায্য করার একটি প্রক্রিয়া।’ তারেক রহমান একজন এক উদার নৈতিক অপপড়সসড়ফধঃরাব খবধফবৎ । দেশ ও জনগণের স্বার্থে তিনি সব কিছু বুঝেও ড. ইউনূসের সঙ্গে ২০২৫ সালের ১৩ জুন লন্ডনে বসে এই সরকারকে প্রায় ৭ মাসের একটি ওয়ার্ক ওভার দিয়েছেন। জাতি প্রত্যাশা করে প্রফেসর ইউনূস ও তার সরকার এই ওয়ার্ক ওভারে ষড়যন্ত্রের পরিবর্তে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ‘যদি’ ‘কিন্তু’ থাকবেই। প্রশ্ন হলো-যদি ড. ইউনূসের সরকার ষড়যন্ত্রমূলক সূক্ষ্ম কৌশলী নকশা এবং অদৃশ্য প্রভাবের বলয় তৈরি করে ক্ষমতায় দীর্ঘ মেয়াদে থাকেন- তাহলে কি করা উচিত? এই অন্তর্বর্তী সরকার সেইফ এক্সিট পাবেন? দেশে আইন-শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে? বন্ধ হবে মবের সংস্কৃতি? বন্ধ করা যাবে কি মৃতকে কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি?- এসব প্রশ্নের উত্তর নেই জনগণের কাছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যেহেতু জনপ্রিয় দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, সরকার গঠন করবে। দেশের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এবং রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে বিএনপি পদ্ধতিগত, কৌশলগত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটা সকলে প্রত্যাশা করে। আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সাধারণ। প্রাতিস্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে উপদেশ দেবার সক্ষমতা কম। ভুল হতে পারে, তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে এমন বিবচেনা মাথায় রেখে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি’র জন্য করণীয় হিসেবে ৫টি বিশেষ পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই :- এক, সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য মেধাভিত্তিক ও তথ্যনির্ভর কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য। নেতা-কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন, হালনাগাদ তথ্য শেয়ার এবং কার্যকর সমন্বয়, এসবের মাধ্যমে সংগঠন আরও শক্তিশালী হতে পারে। দুই, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি জরুরি। সরকারি মিডিয়ার বাইরে নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তথ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়। তিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আধুনিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন করলে বিএনপির অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিম-লে আরও সুস্পষ্ট হবে। চার, নাগরিক ও ভোটারদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করতে হবে। কেন একটি দল হিসেবে বিএনপি প্রয়োজনীয়, এটি পরিষ্কারভাবে জনগণকে বুঝাতে হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে। পাঁচ, দলের সাংগঠনিক আধুনিকায়ন অপরিহার্য। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি, এক ব্যক্তিকে একাধিক পদে না রাখা, যুবক ও নারীদের অন্তর্ভুক্তি, এবং তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার—এসবের মাধ্যমে সংগঠন আরও আধুনিক ও কার্যকর হতে পারে। স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সেল গঠন ও সারাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রক্রিয়াটিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ছয়, ২০২৩ সালে প্রণীত বিএনপি’র ৩১ দফা জনগণের কাছে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা দরকার, কারণ রাষ্ট্র সংস্কারের যাবতীয় বিষয়বস্তু সেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সার্বিকভাবে, এগুলো বাস্তবায়নে আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও কৌশলগত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
রাজনীতিতে প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষত, বাংলাদেশের ধর্ম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সহজ-সরল মানুষকে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করা খুব সহজ। তারেক রহমান এক বক্তব্যে বলেছেন- বাংলাদেশে একটি দল বেহেস্তের টিকেট দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে ভয়ের কারণ আছে। তবে তারেক রহমানের দীর্ঘ নেতৃত্ব বাংলাদেশের জনগণকে শিখিয়েছে ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ।’ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বাঁক বদলের গুরুত্বপূর্ণ মোড়। অদৃশ্য শক্তি এবং তথাকথিত ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’-এর প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এগিয়ে যাবে। এর নেতৃত্ব দিবেন তারেক রহমান। ইতোমধ্যে আলোচনা হচ্ছে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন নিছক রাজনৈতিক ঘটনা মাত্র নয়; এটি প্রতিরোধ, প্রত্যাশা এবং পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবে। জনগণের আস্থা, সংগঠনের শৃঙ্খলা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে পারলে বিএনপি সংকটকালীন মুহূর্তকে তাদের পক্ষে কাজে লাগাতে পারবে। তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে দলটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সময় অত্যন্ত সীমিত—সঠিক নেতৃত্ব, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং সুসংগঠিত কার্যক্রমই আগামী দিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
বস্তুত অদৃশ্য শক্তি ও ড. ইউনূসের ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’-এর বিরুদ্ধে তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী দলের সংগ্রাম সর্বক্ষণ চলমান। সাহস, কৌশল, ঐক্য, প্রযুক্তি এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সমন্বয়েই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রি-মেটিকুলাস, মেটিকুলাস, সুপার-মেটিকুলাস ডিজাইন কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তার প্রতি তারেক রহমানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। গভীর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এর প্রতিটি স্তরে তারেক রহমানের নেতৃত্বে যথার্থ কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে বলে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে।
(লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com