রাঙ্গামাটি:- ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী খরস্রোতা নদীতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠা পানির কৃত্রিম হ্রদ—‘কাপ্তাই হ্রদ’।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এ হ্রদ বিশাল মৎস্যভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। সরকার প্রতিবছর এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে।
একসময় কাপ্তাই হ্রদের মাছ স্থানীয় বাজার মিটিয়ে দেশের ভেতরে বাজারজাত করা হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হ্রদের মাছের চাহিদা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও বর্তমানে হ্রদ থেকে আগের মতো বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হ্রদের মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে আছে ছোট মাছ—বিশেষ করে কাচকি ও চাপিলা।
জানা যায়, সীমার্ক, বিডিফুড, মাসুদ ফিশ ও আনরাজ ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন মৎস্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে কাচকি ও চাপিলা সংগ্রহ করছে। আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এসব মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে আরব আমিরাত, লন্ডনসহ বিশ্বের নানা দেশে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিনিধি দলও কাপ্তাই হ্রদের কাচকি ও চাপিলা মাছ আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদের মাছের বিদেশমুখী বাণিজ্য ইতোমধ্যেই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। শুধু রাঙ্গামাটি থেকেই প্রতিদিন প্রায় তিন মেট্রিক টন মাছ বিদেশে রপ্তানির জন্য পাঠানো হয়, যার স্থানীয় বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। জেলেদের ধরা মাছ প্রথমে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) ঘাটে রাজস্ব দিয়ে বাছাই ও বরফে প্যাকিং করা হয়। এরপর তা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় যায় এবং সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে রপ্তানি হয়।
বিএফডিসি ঘাটের ব্যবসায়ী মো. বুলবুল হোসেন বলেন, একসময় বড় মাছ (কার্প জাতীয়) বেশি পাওয়া যেত। তবে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। ফলে ছোট মাছের আধিক্য বেড়েছে। তবে ছোট মাছ বিদেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং বাণিজ্য বাড়ছে।
বিএফডিসি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ীদের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ১৫–২০ লাখ টাকার ছোট মাছ বিদেশে রপ্তানির জন্য বিক্রি করা হয়। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরাসরি রপ্তানি করতে পারেন না। বাইরের ব্যবসায়ীরা কিনে বিশেষ প্যাকেজে রপ্তানি করে। যদি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরাসরি রপ্তানি করতে পারতেন, আয় আরও বাড়ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মাছের জন্য সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাঙামাটিতে প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপন করা গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন এবং আঞ্চলিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
বিএফডিসি রাঙ্গামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আট প্রজাতির মাছের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে—বড় আইড়, সাদা ট্যাংরা, বাঁচা, কাজরি, কেচকি, বাঁশপাতা, ছোট আইড় ও বাতাসী। গত ২৪–২৫ বাণিজ্যিক বছরে এই আট প্রজাতির মোট ৩৩ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ কেজি মাছ ঘাটে অবতরণ করেছে। এতে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ৮ কোটি ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮৬ টাকা।
বিএফডিসি রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক কমান্ডার (নৌবাহিনী) মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, আমাদের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান আপাতত নেই। তবে রাজস্ব আদায় ও স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পরিমাণ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মাছের বাজার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। মাছের প্রজনন বাড়াতে বিএফডিসি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বাংলানিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com