রাঙ্গামাটি:- টিউবওয়েল নেই গ্রামে। আশপাশে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও। বর্ষাকালে কিছুটা পানি মেলে, তাও ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের কূপ ও ঝিরি থেকে। গ্রীষ্মকাল বা শুষ্ক মৌসুমে সেটাও মেলে না। বাধ্য হয়েই রান্না-বান্নাসহ যাবতীয় কাজে হিসাব করেই পানি ব্যবহার করতে হয় সূর্যমুখি চাকমার (৪৩)। এতে করে সারাবছরই পেটে ব্যথাসহ পানিবাহিত নানা চর্মরোগে ভুগতে হয় তাকে। এ সমস্যা কেবল সূর্যমুখির একার নয়; রাঙামাটির বরকল উপজেলার ১৩টি গ্রামের চিত্র এটি।
ভারত সীমান্তবর্তী চান্দবিঘাটের গ্রামের বাসিন্দা সূর্যমুখি বলেন, ‘দূরের কুয়ার গোলা পানিতেই গোসল করতে হয়। সেই পানিই আবার খাওয়ার জন্য নিয়ে আসি। এই বুড়ো বয়সে এতো দূর থেকে পানি আনা শরীরে কুলায় না।’
ষাটোর্ধ্ব মনিমালা চাকমাও একই কষ্টের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মানিক, কলাপুনাছড়া, রামেক্কেছড়ি,গোহাইহাটসহ ১৩টি গ্রামের প্রায় দেড়শ পরিবার তীব্র পানির সংকটে ভুগছে। যেসব কুয়া থেকে পানি আনা হয় তা খাওয়ার অনুপযুক্ত ও নোংরা। সেই পানি খেয়ে সবাই সারাবছর নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে ভুগে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলা। এই এলাকার ৩ নম্বর আইমাছড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মিলে রামেক্কেছড়ি মৌজা। সেখানে আন্দারমানিক, কালাপুনা ছড়া, গোইহাট ছড়া, রামেক্কেছড়ি, দজর পাড়া, সিএম পাড়া, করল্ল্যাছড়ি, উপরকরল্ল্যা ছড়ি, ভূয়াঠেক, ধামাইপাড়া, দোজরিপাড়া, নয়াপাড়া ও সামেলেং ছড়া মিলে ১৩টি গ্রাম রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। এমনকি সেখানে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কালাপুনা ছড়ার চিরজ্যোতি চাকমা বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা আমাদের প্রতি খেয়াল করেন না। কোনো সরকারি কর্মকর্তাও আমাদের এদিকে আসেন না। তারা ঘুরতে আসলেও বুঝতে পারত এখানে পানির কত কষ্ট। এখানে কোন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও নেই, অসুখ হলে যে চিকিৎসা নেবো; সে উপায়ও নেই।
৩ নম্বর আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ পানির সমস্যা। টিউবওয়েলের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ৩০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়। আর বাকী ৭০ শতাংশ জেলা পরিষদের সদস্য একাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ৩০ শতাংশ বরাদ্দের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ৪টি করে টিউবওয়েল পায়। ফলে এতো বড় ইউনিয়নে সব এলাকায় দেওয়া সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলকে বার বার অনুরোধ করেছি-চান্দবিঘাট, আন্দারমানিক, কালাপুনাছড়া, ভূয়াঠেকসহ কিছু এলাকায় টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য। তিনি আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশুদ্ধ পনির সংকট নিরসনে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
রাঙ্গামাটি জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, এলাকাগুলো একদিকে অতি দুর্গম অন্যদিকে প্রকল্পের কম বরাদ্দ আসায় সেখানে নলকূপ দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে এসব এলাকায় নলকূপ স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ চলছে। প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়া গেলে এসব এলাকায় নলকূপ দেওয়া হবে।সমকাল
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com