ডেস্ক রির্পোট:- কোরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে গত ২১ জুন চালু করা হয়েছে বিশেষ বন্দিদের রাখার জন্য ‘বিশেষ’ কারাগার। কারগারটিতে ২৫০ জন ভিআইপি বন্দিকে রাখা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সরিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ ভিআইপি বন্দিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ধর্ষ বন্দিসহ সেখানে আরও ৮০ জনকে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য ভিআইপি বন্দিদেরও এ কারাগারে নেওয়া হবে বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, সালমান এফ রহমান, এ বি এম তাজুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেনসহ ৫০ ভিআইপি বন্দির বাস এখন সেই বিশেষ কারাগারে। কারাগারটিতে রয়েছে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে বড়সড় পাঠাগার। সেখানে গল্প, উপন্যাস, মনীষীদের জীবনীগ্রন্থ, ইসলামী ও আইনের বইসহ নানা ধরনের বই রয়েছে।
তারা ছাড়াও গত বুধবার পর্যন্ত বিশেষ কারাগারে অন্যদের মধ্যে বন্দি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক এমপি শাজাহান ওমর, সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করীম চৌধুরী, সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল, সাবেক এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী, সাবেক এএসপি জাবেদ ইকবাল, সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক সচিব কামাল নাসের চৌধুরীসহ ৫০ জন।
জানা গেছে, পাঠাগার থেকে পছন্দমতো বই নিয়ে পড়ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। এ ছাড়া কেউ কেউ খালি গলায় গান করেন। এর মধ্যে আনিসুল হক, কামরুল ইসলাম আইনের বই বেশি পড়ছেন। হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খানসহ অন্য সাবেক মন্ত্রীদের আগ্রহ মনীষীদের জীবনীগ্রন্থে।
আরও জানা গেছে, কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দিয়ে এসব বই নিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে তারা দুটি পত্রিকা পড়তে পারেন। এসব বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটাচ্ছেন তারা। কেউ কেউ ইসলামী বইয়ের চাহিদাও দিচ্ছেন। ভিআইপি বন্দিদের বিশেষ কারাগারটিতে পাশাপাশি সেলে রাখা হয়েছে। তারা একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। কারাগারটিতে প্লেগ্রাউন্ড রয়েছে। সেখানে কিছু সময়ের জন্য তারা হাঁটার সুযোগ পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ এ কারাগারে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে রয়েছে অভিনবত্ব। এতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগে থেকেই ভিআইপি বন্দিদের সঙ্গে তার স্বজনদের কারা কখন দেখা করবেন, কত সময় কথা বলবেন, কোন বুথে দেখা করবেন, তা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে বন্দিদের স্বজনরা ডিজিটালি আবেদন ও দেখা করার সময় পাচ্ছেন।
ভেতরে যারা দায়িত্ব পালন করেন, সব কারারক্ষীকে ব্যবহার করতে হচ্ছে বডিক্যামেরা। কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তা মনিটর করেন। কারারক্ষী ভেতরে কী করছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, বন্দি কী বলছেন, সব কিছুর অডিও-ভিডিওসহ রেকর্ড থাকছে কর্তৃপক্ষের কাছে।
কারা সূত্র জানায়, চলমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে মহিলা কারাগারের জন্য আগেই ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমান বাস্তবতার কারণে আপাতত মহিলা কারাগার চালু না করে এতে গত ২১ জুন থেকে ‘বিশেষ কারাগার’ চালু করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছুদিন আগে কেরানীগঞ্জের মহিলা কারাগারটিকে ‘বিশেষ কারাগার’ করার প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় এর অনুমোদন দেয়।
সূত্রটি আরও জানায়, বিশেষ কারাগারে প্রাথমিকভাবে ২৫০ জন ভিআইপি বন্দিকে রাখা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য থাকছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা, বডি ক্যামেরাসহ এআই নজরদারির ব্যবস্থা। বন্দিদের নিরাপত্তা ও কারাগারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কারা কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। পাঠাগার, হাসপাতালসহ বেশকিছু সুবিধাও রয়েছে এ কারাগারে।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপিরা কারাবাসে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এ কারণে আগের মতো নানা আবদার তারা করেন না। তবে মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তাদের কারও কারও আবদার থাকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের। কিন্তু এটি কোনোভাবেই সম্ভব না বলে তাদের আবদার পূরণ করতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, বিশেষ কারাগারের জন্য সব কিছুতেই বিশেষত্ব রয়েছে। বিশেষ কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার, জেলার থেকে শুরু করে রক্ষী পর্যন্ত যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সুনাম ও দক্ষতার দিক থেকে পরীক্ষিত। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে চিহ্নিত করে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুরো কারাগারটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। এখানকার নিরাপত্তার আয়োজনও বিশেষ।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেন, বিশেষ কারাগারে দায়িত্ব পালনকারীদের সামান্য ভুলও অ্যালাও করা হচ্ছে না। তাদের ট্রান্সফার করে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শাস্তি হিসেবে কয়েকজন কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ এই কারাগারটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৯০২ সালে ৩৯ একর জমি নিয়ে বড় পরিসরে যাত্রা শুরু করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ১৯৮০ সালে আশপাশে বড় ভবন হওয়ার কারণে কারাগারটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে কেরানীগঞ্জে বিশাল এলাকা নিয়ে কারাগার নির্মাণ করা হয়। এ সময় পুরুষ ও মহিলা কারাগারের জন্য আলাদা ভবন বানানো হয়। ২০১৬ সালে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বন্দিদের পুরুষ কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পর মহিলা কারাগারের নির্মাণকাজ শুরু করে সরকার।
২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী কর্মকর্তা ও নারী রক্ষীর অভাবে কারাগারটি চালু করা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র কালেরকণ্ঠ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com