ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছে আওয়ামী লীগ। এখান থেকে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দেশে ও বিদেশে থাকা আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের নিয়ে একটি চক্র এখন পুরোমাত্রায় সক্রিয়। শেখ হাসিনা ও জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে এখান থেকে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। বৈঠক করে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে ঝটিকা মিছিলসহ নাশকতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অর্থের জোগান দিচ্ছেন নানক। আস্তানাগুলোয় বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্র রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ওই সব আস্তানায় আওয়ামী লীগের অনেক বুদ্ধিদাতা নিয়মিত যাতায়াত করছেন। আস্তানার মালিক হাছান মাহমুদ। তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. পলাশ চৌধুরীর শ্যালক। হাছান মাহমুদ ও পলাশের ছেলের সঙ্গে প্রায় প্রতি রাতে টেলিফোনে কথা বলেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। প্রায় সময়ই বিভিন্ন দিকনির্দেশনা নিয়ে হাছানের সঙ্গে কথা বলেন ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনাকে ‘আপু’ সম্বোধন করেন পলাশের ছেলেরা।
হাছান মাহমুদ, দুলাভাই পলাশ, দুই ভাগনে যুবলীগ নেতা পিউল ও ছাত্রলীগ নেতা পাপন-এই চারজন নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলসহ নাশকতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এদের অর্থের জোগান দিয়ে সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক। তাদের বাসাবাড়িগুলোতে পুলিশ তল্লাশি করলে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।
এ বিষয়ে জানতে আস্তানার মালিক হাছান মাহমুদকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর হাছানের ভাগনে পিউলকে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাছান মাহমুদের (৪২) বাসা মোহাম্মদপুর মেট্রোপলিটন হাউজিংয়ের ৩৫ নম্বর লিফটের ৫(বি)। আর তার দুলাভাই নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. পলাশ চৌধুরীর বাসা মেট্রোপলিটন হাউজিংয়ের ৪৮ নম্বরের লিফটের ৪-এ। পলাশ চৌধুরীর দুই ছেলের মধ্যে পিউল মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের সদস্য এবং ছোট ছেলে পাপন ছাত্রলীগ নেতা। নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে পালিয়ে থাকা পলাশ চৌধুরী, শ্যালক হাছান আর তার দুই ছেলে মিলে মোহাম্মদপুর এলাকায় আত্মগোপনে থেকে দলকে সংগঠিত করার নীলনকশা করে যাচ্ছেন। হাছান মাহমুদের ভাগনে যুবলীগ নেতা পিউলের সঙ্গে দুই মাস ধরে বহুবার বৈঠকে মিলিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পিউলের ছোট ভাই পলাশ চৌধুরীর ছোট ছেলে ছাত্রলীগ নেতা জহুরী মহল্লা, বাবর রোডসহ মোহাম্মদপুর এলাকায় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগ্নেয়াস্ত্র মজুত
হাছান মাহমুদের বাসায় লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর অস্ত্র দুটি তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে রেখে গেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জমার নির্দেশ দেওয়ার পরও অস্ত্র দুটি জমা দেওয়া হয়নি। তবে এ দুটি ছাড়াও তাদের বাসায় আরো অনেক অবৈধ অস্ত্র মজুত রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। হাছান মাহমুদের বাবা-মা জহুরী মহল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের বাসায় অনেক আগে থেকেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সব অস্ত্র মজুত রাখত বলে জানা গেছে। থানায় অস্ত্র দুটি জমা হয়েছে কি না এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
গাড়িতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়ে ঘোরেন হাছান
এদিকে হাছান মাহমুদ নিজে কোনো ‘রাজনীতি’ করছেন না বলে দাবি করেন। তবে নিজের বিলাসবহুল গাড়িতে একেকবার একেক টেলিভিশন চ্যানেলের স্টিকার লাগিয়ে এবং স্টিকারযুক্ত ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
গত সোমবার পর্যন্ত হাছান মাহমুদ চ্যানেল ৯-এর স্টিকার লাগিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। অথচ রাজনীতির বাইরে পেশাগত বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি খাসজমি ও ওয়াক্ফ জমি দখলে নিয়ে করা মধুসিটির অপারেশন হেড পদবিতে চাকরি করছেন তিনি। অসাধু উপায়ে রাজউকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সুবিধা দিয়ে বাগিয়ে নেওয়া জমিতে এ আবাসন গড়ে তোলেন হাছান মাহমুদ। মধুসিটিতে তার নির্মাণাধীন ৯ তলা ভবন রয়েছে বলেও জানা গেছে। গত এপ্রিল মাসে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন তিনি।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, পিউল এবং তার মামা হাছান মাহমুদ প্রতিদিন রাত ১২টার পর নিজ বাসায় বৈঠক করেন। গত এক মাসে স্থায়ীভাবে তাদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা থাকতেন পলাশ চৌধুরী। সকালবেলা মাঝেমধ্যে হাঁটতে বের হতেন আবার তাড়াহুড়া করে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়তেন।
এমনকি জাহাঙ্গীর কবীর নানকের ছত্রছায়ায় জহুরী মহল্লা, বাবর রোডসহ মোহাম্মদপুর থানায় মাদকের নিয়ন্ত্রণ করতেন পিউল। পুলিশের কাছে এ তথ্য থাকলেও তাদের কখনো গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নাশকতা ও যত ষড়যন্ত্র
হাছান মাহমুদের দুলাভাই পলাশ চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক বুদ্ধিদাতারও নিয়মিত বৈঠক চলছে। সেখানে সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলেও কথা বলেন, যা পলাশ চৌধুরীর ফোনকল রেকর্ড চেক করলে পাওয়া যাবে। তার সঙ্গে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের ঘনিষ্ঠতা অনেক আগে থেকেই। নানকের আশীর্বাদ পেয়েই নবাবগঞ্জ নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য টিকিট পান পলাশ।
গত শুক্রবার রাত ১০টার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে প্রবর্তনা নামে একটি প্রতিষ্ঠানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ওটা কবি, দার্শনিক ও মানবাধিকারকর্মী ফরহাদ মজহার ও অর্থনীতিবিদ ফরিদা আখতারের প্রতিষ্ঠান। টার্গেট করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রের দাবি, এর মাধ্যমে মূলত দেশকে অস্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করতে চাচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা।
জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, আগের চেয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে। কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।আমার দেশ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com