ডেস্ক রির্পোট:- সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অর্থ পাচারের মাধ্যমে ৯৭২টি সম্পদ ক্রয় করেছেন কমপক্ষে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি। তাদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান দল প্রাথমিকভাবে ৭০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে সবার আয়কর নথি তলব করেছে।
অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, ‘৪৫৯ জন বাংলাদেশি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করে। পরবর্তী সময়ে এসব অর্থ দুবাই স্থানান্তর করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গোল্ডেন ভিসা সুবিধা নিয়েছে। এর আওতায় ওই ব্যক্তিরা ৯৭২টি সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।’ দুদকের তদন্ত দল অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব ব্যবসায়ীর নামে ইস্যুকৃত টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ভিউ ডিটেইলসের সব তথ্য চেয়েছে। আজ ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দুদক এসব তথ্য দিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছে।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ দুবাইয়ে স্থানান্তর হয়েছে। এসব অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলেফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি, আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছে ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য মিলেছে। যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলারের বেশি। দুবাইয়ে বাংলাদেশিরা গোপনে ক্রয় করা সম্পদের মূল্য কম করে হলেও এক বিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক অর্থনীতির কভিডকালীন মন্দার মধ্যেও দেশটির আবাসন খাতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা ছিল সবার শীর্ষে।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দেশের নির্মাণ খাত ও ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ী দুবাই চলে যান। এর পর থেকে তারা সেখানে বসবাস করছেন। দেশের ব্যবসা থেকে উপার্জিত মুনাফা প্রতিনিয়ত দুবাইয়ে স্থানান্তর করেন তারা। ওই ব্যক্তিরা দুবাইয়ের আবাসন ও নির্মাণ খাতে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অভিযোগের তথ্য মতে, দুবাইয়ে মোট প্রপার্টির বাজার ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ আছে বিদেশিদের মালিকানায়।’ অভিযোগের তথ্য মতে, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ‘গোল্ডেন ভিসা’ সুবিধা চালু করার পর বাংলাদেশিদের দুবাইয়ে প্রপার্টি ক্রয়ের মাত্রা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। বিত্তবান বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে ২০১৯ সালে গোল্ডেন ভিসা চালু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সম্পত্তির মালিকানা থাকলেই এ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলোও দূর করা হয়েছে। গোল্ডেন ভিসাধারীরা পরিবারসহ ১০ বছরের রেসিডেন্সিয়াল সুবিধা পান। পেয়ে থাকেন সহজ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ব্যবসা পরিচালনার অনুমতির প্রক্রিয়াও সহজ।’
তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনার অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি ওই নির্দেশ দেন তৎকালীন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ। ৩০ দিনের মধ্যে চারটি সংস্থাকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও রহস্যজনক কারণে সেই অনুসন্ধান থেমে থাকে। প্রায় দুই বছরেও অনুসন্ধানটি গতি পায়নি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সম্প্রতি সেই অনুসন্ধান নতুন গতি পেয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাইতে শুরু করেছে কমিশন।
দুদক প্রাথমিকভাবে যে ৭০ বাংলাদেশির নথি তলব করেছে, তারা হলেন আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল এইচবিএম ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ কে ইকরামুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা ওরফে হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান ওরফে সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার ও আহমেদ সামীর পাশা।
তালিকায় আরও রয়েছেন ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন জানান, সঠিক তদন্ত আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্থ পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও পাচার হওয়া সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে।কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com