ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ নাকি বৃহৎ বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে চলেছে। ভারতের সাত বোন রাজ্য ও পশ্চিম বাংলার কয়েকটি জেলা নিয়ে প্রতিষ্ঠা হবে এই বৃহৎ বাংলা। তাতে পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতা থেকে সরিয়ে মালদহে স্থাপন করা হবে।
পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত এই বাংলাকে কয়েকটি রাজ্যে ভাগ করা হবে, প্রতিষ্ঠা করা হবে খিলাফত। জামায়াত ও হিজবুত তাহরীর এ পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। – এমনই এক চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে দ্যা টাইম ও আনন্দবাজার গ্রুপের সহযোগি মিডিয়া এই সময়।
হিমাদ্রি সরকার, অয়ন্তিকা সাহা, অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রচারিত এই আকাশ কুসুম কল্পিত স্টোরিতে বলা হয়েছে, “কেউ বলছেন বিপ্লব, কেউ গণ-অভ্যুত্থান, কারও কারও আবার দাবি, ‘একাত্তরে নয়, এত দিনে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ।’
তবে গণআন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার ঢাকা ছাড়ার মাস দশেক পরে নানা তথ্য-উপাত্ত হাতে পাওয়ার পরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিরন্তর চর্চা করা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার সাফ ঘোষণা— ‘আসলে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের অভ্যুত্থান হয়েছে বাংলাদেশে। অন্তত বছর পাঁচেক নিবিড় পরিকল্পনার ফসল ছিল ‘অপারেশন হাসিনা’ রূপায়ণ।’
তবে হাতে আসা তথ্য দেখে রীতিমতো কপালে ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের। কারণ, বাংলাদেশ দখল জঙ্গিদের নেহাতই প্রাথমিক লক্ষ্য। আসল উদ্দেশ্য ‘বৃহৎ বাংলা’ গঠন, যার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের উত্তর–পূর্বের সাত রাজ্য এবং কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা রয়েছে।
এই বিস্তীর্ণ এলাকায় দখলদারি কায়েমের পরে সেখানে খিলাফত প্রতিষ্ঠাই হলো জঙ্গিদের লক্ষ্য। প্রশাসনিক সুবিধের জন্য ‘বৃহৎ বাংলা’-কে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে মৌলবাদী জঙ্গিদের। ভারতের কাছ থেকে দখল নেওয়া ‘পশ্চিম বাংলা’ প্রদেশের রাজধানী করার কথা ভাবা হয়েছে কলকাতা নয়, মালদা শহরকে।
ওই গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘যে দিন থেকে হাসিনার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে, সেই দিন থেকেই ‘বৃহৎ বাংলা’ খিলাফত গঠনের পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর গজ়ওয়াতুল হিন্দ গঠনের পরিকল্পনার সঙ্গে এই ‘বৃহৎ বাংলা’ কর্মসূচির মিল থাকলেও দু’টিকে একেবারে এক বলা যায় না।
বাংলাদেশের জামাতে ইসলামি এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বে ‘বৃহৎ বাংলা’ কর্মসূচি আরও সুনির্দিষ্ট, স্পষ্টও বটে। তবে ‘বৃহৎ বাংলা’ কর্মসূচি যে আদতে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএস-এর পরিকল্পিত, তার চিহ্ন আমরা এর পরতে পরতে দেখতে পাচ্ছি।’
ভারতের গোয়েন্দা কর্তার মতে, ‘এই কারণেই ঢাকা দখলের পর থেকে আমেরিকার প্রশিক্ষণ পাওয়া ছাত্রনেতা থেকে জামাত ঘনিষ্ঠ সাবেক সেনা অফিসারেরা, বা আন্দোলনে না-থেকেও অন্তর্বর্তী সরকারের ক্যাবিনেটে মন্ত্রী (উপদেষ্টা) হয়ে বসা এনজিও-ওয়ালারা ভারতের সেভেন সিস্টার (উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্য)-কে বিচ্ছিন্ন করা, চার দিনে কলকাতা দখল এবং সীমান্ত মুছে দেওয়ার কথা কেবলই বলে চলেছে।
মৌলবাদীরা সীমান্তের নানা জায়গায় বিএসএফ-কে আক্রমণ করেছে। সর্ব শেষ, মুর্শিদাবাদ ও মালদায় গোষ্ঠী সংঘর্ষে তাদের সংশ্লিষ্টতার খবর মিলেছে। এই কারণেই হাসিনা বিদায়ের পর দিন থেকেই ঢাকার রাস্তায় আইএস-এর পতাকা নিয়ে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গিদের। পুলিশ ও সেনা তাদের পাহারা দিয়েছে। জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৭০০-র বেশি কট্টর জঙ্গিকে।’
আর এক গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের গণহত্যার আগে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং ঘটনার পরে ইসলামাবাদের দীর্ঘ নীরবতায় স্পষ্ট-ভারতের বিরুদ্ধে ফের বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশেকেও যে তারা সামিল করবে, সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রেমে মুগ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরিফ সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন— ‘হারিয়ে যাওয়া দুই ভাই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আবার মিলেছি।’
করাচি থেকে মাসে মাসে জাহাজে করে কন্টেনার বোঝাই পণ্য আসা শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। পাকিস্তানে গিয়ে মহড়া দিয়ে এসেছে বাংলাদেশের নৌবাহিনী। পাকিস্তানের সেনা প্রতিনিধি হিসাবে আইএসআই-এর কর্তারা গোপনে সফর সেরে যাচ্ছেন বাংলাদেশে।
রোহিঙ্গা এবং অন্য মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের আলোচনার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে ইউনূস সরকার। অতি সম্প্রতি, কাশ্মীরে জঙ্গিহানার পরেও চট্টগ্রাম লালখান মাদ্রাসায় গিয়ে মৌলবাদী নেতা হারুন ইজ়হার ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন ইউনূস সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
কাশ্মীরে হামলার পরে ইউনূস সরকারের এই সিনিয়র উপদেষ্টা ফেসবুকে পোস্টে লিখেছিলেন, ভারত সরকার নিজেরা এই হামলা করিয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা উচিত। সমালোচনার তোড়ে কয়েক ঘণ্টা পরে সেই পোস্ট তিনি মুছে ফেলেন। এই হারুন ইজ়হারের পরিচয়-তিনি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই–তৈবার বাংলাদেশ শাখার প্রধান সমন্বয়ক।
জেল থেকে বেরোনো জঙ্গিদের জেহাদের পথে ফেরাতে এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কলহ মেটাতে বাংলাদেশ চষে ফেলছেন এই হারুন। জেল থেকে মুক্ত আনসারুল্লা বাংলা টিম-এর প্রধান মৌলানা জসীমুদ্দিন রহমানির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ার পরিকল্পনাও নিয়েছেন হারুন, যেখানে মুছে যাওয়া সংগঠনগুলির সাবেক জঙ্গিদের জায়গা দেওয়া হবে।
‘মানবসভ্যতার বুকে ক্ষত চিহ্ন’, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি হাসিনার
এর মধ্যেই ঢাকায় নতুন করে ঘাঁটি সাজিয়ে বসেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ঢাকায় শেষ বার এমন সক্রিয় ছিল আইএসআই। ভারতে এই চর সংস্থার এজেন্টদের পরিচালনা করে যে সব হ্যান্ডলার, গত ৭-৮ মাসে তারা ঢাকায় পাক দূতাবাস থেকে কাজ শুরু করছে বলে ভারতের গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে।
সুতরাং নিশ্চিন্তির কোনও অবকাশ নেই— বলছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘বৃহৎ বাংলা’-র খোয়াব দেখিয়ে বাংলাদেশের জেহাদিদের দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের পূর্বাঞ্চলে নাশকতার পরিকল্পনা এই সময়েই বাস্তবায়নে নামতে পারে আইএসআই, যাতে সাঁড়াশি চাপে ফেলা যায় ভারতকে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com