রাঙ্গামাটি:- বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে বাংলা বছর বিদায় ও নতুন বছর বরণে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-সাংক্রাই-চাংক্রান-পাতা উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, চাংক্রান, পাতা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শহরের পৌরসভা চত্ত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘আদিবাসী জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে অধিকতর শামিল হই’ এই শ্লোগানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। এছাড়া প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, প্রাক্তন সাংসদ ঊষাতন তালুকদারসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদযাপন পরিষদের আহবায়ক অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সংবিধানে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যে ন্যায্য দাবি ও আন্দোলন দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে, তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আমরা আশা করি সংবিধান সংস্কার হলে হয়তো এই দাবি পূরণ হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের কিশোর যুবকদের নিরাশা, হতাশা, বঞ্চনার কথা শোনাতে চাই না। আগামীর বাংলাদেশে তারা যাতে এই সামাজিক উৎসবগুলো আরো আনন্দের সাথে উদযাপন করতে পারে, আমরা সেই আশাই করি।
উদ্বোধনের বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের ১৩টি জনগোষ্ঠী তাদের স্ব স্ব নামে বাংলা বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে থাকে। এই উৎসব ঘিরে এখানকার মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বভাব তৈরি হয়। এবছর আনন্দোল্লাসে পাহাড়ের মানুষ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করতে পারছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সংসদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, আমাদের কৃষ্টি প্রথা সংস্কৃতি আমরা ভুলে যেতে বসেছি। আমরা একদিন হারিয়ে যাবো। আমাদের যদি বৈসাবি বলা হয় বিজু, সাংগ্রাই ভুলে যাবো। আমাদের নৃ-গোষ্ঠী বলা হয় তাহলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুারা ভুলে যাবো। ভুলে যাওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা। আমাদেরকে আমাদের আমাদের মতো থাকতে দিন। এই শুভ দিনে কোথাও কোন গোলযোগ না হয়, সুন্দর ভাবে আমার আমাদের উৎসব পালন করতে চাই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের স্ব স্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি পৌরসভা চত্ত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া মিত্র চাকমা বলেন, প্রতিবছরই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এই র্যালিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমরা এলাকার নারী-পুরুষরা র্যালিতে অংশ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই।
আরেক অংশগ্রহণকারী সুজিতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। এই র্যালি এবং অন্যান্য আয়োজনগুলো আমাদের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিয়ে সবাই যাতে সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে পারে এটিই কামনা।
উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, পাহাড়ের ১৪টি ভাষাভাষি ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে যে সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত মেলবন্ধন আছে সেটি তুলে ধরার জন্যই আমরা প্রতিবছর এই আয়োজন করে থাকি। প্রতিবছর আমাদের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। তবে পাহাড়ের জাতিগোষ্ঠীদের ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি আমরা আমাদের দাবিগুলোও সরকারের কাছে তুলে ধরি। আমি মনে করি, আমাদের দাবি পূরণের মাধ্যমে পাহাড়ের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং সরকারেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
আগামী শনিবার নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে দশ দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বৈসাবি উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার শোভাযাত্রায় শুরু হওয়া বিঝু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-সাংক্রাই-চাংক্রান-পাতা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলাসহ আরো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। চার দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান শেষ হবে আগামী শনিবার ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে।পাহাড়২৪
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com