ডেস্ক রির্পোট:- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কব্যবস্থা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা এখন ক্রেতাদের ধৈর্য ও সমর্থন চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ক্রেতারা বিষয়টি কীভাবে বিবেচনা করবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী। ইতোমধ্যে, স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের মার্কিন ক্রেতারা তাদের কিছু স্থানীয় সরবরাহকারীর সঙ্গে পুনর্বিবেচনার আলোচনা শুরু করেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন বন্দর বা কারখানায় তাদের চালান আটকে রাখতে বলেছেন এবং অন্যরা দাম ছাড় চেয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। তবে রপ্তানিকারকরা আজ (মঙ্গলবার) থেকে বিপুলসংখ্যক ক্রেতার সাড়া পাবেন বলে আশা করছেন। কারণ গত রবিবার ছুটির দিন ছিল এবং পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ ইতোমধ্যেই সদস্যদের এ বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করতে বলেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) মার্কিন ক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধৈর্য ধরতে এবং সরবরাহকারীদের ওপর অর্ডার স্থগিত রাখা এবং মূল্য ছাড়ের মতো অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপিয়ে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি পাঠাবেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বাণিজ্য সংস্থাটি মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের কূটনৈতিক যোগাযোগ সম্পর্কে ক্রেতাদের অবহিত করবে যাতে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক সুসংহত করা যায়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সহসভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান ফরহাদ বলেন, তার একজন মার্কিন ক্রেতা ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অর্ডারের দাম কমানোর জন্য অনুরোধ করেছেন এবং ০ দশমিক ১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের জন্য পুনরায় আলোচনা করতে চান। সেন্স গার্মেন্টস বিডির মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিনি প্রতি বছর একজন মার্কিন ক্রেতার জন্য ০ দশমিক ২ মিলিয়ন পিস পোশাক উৎপাদন করেন এবং তিনি ইতোমধ্যেই মে মাসের জন্য পণ্য পাঠিয়েছেন, জুন মাসের জন্য পণ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবিএর আরেক সদস্য, বলেছেন, ক্রেতা জুলাই মাসের জন্য নির্ধারিত উৎপাদন স্থগিত রাখার এবং আগস্ট মাসের জন্য ০ দশমিক ২২ মিলিয়ন পিসের নতুন অর্ডার রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার একটি সরবরাহকারী কারখানা, যা কেবল ক্রেতাদের জন্য পণ্য উৎপাদন করে, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মার্কিন বন্দরে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতকৃত ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন পোশাকের চালান নিয়ে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। সাইফুর রহমান ফরহাদ বলেন, বিজিবিএর উভয় নেতাই সরকারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কারণ ক্রেতারাও বাংলাদেশ সরকার কী করছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা আমাদের পক্ষ থেকেও আশ্বস্ত হতে চান। এ বিষয়ে ফজলে শামীম এহসান বলেন, একজন মার্কিন ক্রেতা একটি পোশাক প্রস্তুতকারককে পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এক সপ্তাহের জন্য তার উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলেছেন। সংকটকালীন সময়ে তারা ক্রেতাদের সহায়তা চেয়ে চিঠি লিখবেন। তার মতে, বিকেএমইএ সদস্যরা গত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ পেয়েছেন। বাংলাদেশে তৈরি রপ্তানিযোগ্য পণ্য, যার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক, তাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১০.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশ ৬.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রেখেছে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যেখানে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছিল। তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৮.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানির মধ্যে ৭.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক পণ্য এসেছে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com