ডেস্ক রির্পোট:- ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই এখন মন্ত্রণালয়ে তাদের সনদ ফেরত দিচ্ছেন। কেউ কেউ লজ্জিতবোধও করছেন ভুয়া সনদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে সনদ নিয়েছেন, এমন অন্তত ১২ ব্যক্তি সনদ ফিরিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে অবসরে যাওয়া এক ব্যক্তি। এক ব্যক্তি তার আবেদনে সনদ নেয়া ভুল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন কেউ কেউ। লিখেছেন ‘আমি লজ্জিত’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ৮৯ হাজার ২৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা জমা পড়েছে। আছে নানা জাল-জালিয়াতির অভিযোগও।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সনদ ফেরত দিতে আবেদন করা ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা আবেদন করেছেন, নাম প্রকাশ করলে তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন। এ কারণে তাদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ১১ই ডিসেম্বর নিজ দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যারা সনদ নিয়েছেন, তাদের তা ফেরত দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন। এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটি ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ। উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা একটি ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেবো, যারা অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এসেছেন, তারা যাতে স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান। যদি যান, তারা তখন সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন। আর যদি সেটি না হয়, আমরা যেটি বলেছি, প্রতারণার দায়ে আমরা তাদের অভিযুক্ত করবো। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ আহ্বানের পর ১২ জন সনদ ফেরত দিতে আবেদন করেন। উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, আরও যদি কেউ স্বেচ্ছায় সনদ ফেরত দিতে চান, সে জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ সনদ ফিরিয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তিনি বলেন, যেহেতু তাদের পেছনে অর্থ খরচ হয়েছে, তাই আমার একার পক্ষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এ প্রস্তাব পাস করাতে হবে। তারপর সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে। উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া প্রায় ৯০ হাজারের মধ্যে ৪০ হাজার আবেদনের যাচাই বাছাই হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের পুরো শক্তি তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক ধরনের জাল-জালিয়াতি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও চাকরি করছেন অনেকে। জালিয়াতি প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, একজন তার আবেদনে নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও প্রলোভনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছি। এ অনৈতিক কাজের জন্য আমি লজ্জিত। আমি স্বেচ্ছায় এ সনদ ফেরত দেয়ার আবেদন করেছি।
অন্যদিকে, এর আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সনদ বাতিল করা হয়। তারা হলেন- সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, এ কে এম আমির হোসেন ও যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার। এই সনদ ব্যবহার করে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৫ই সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ঘোষণা দেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা সরকারি চাকরি পেয়েছেন, তাদের তালিকা করা হবে। যাচাই বাছাই করা হবে। পরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন তাদের বিস্তারিত তথ্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ৮৯ হাজার ২৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা জমা পড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন। সে হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৬ শতাংশ।মানবজমিন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com