ডেস্ক রির্পোট:- ঢালিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভিন পপি, যিনি একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত, দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র জগত থেকে দূরে রয়েছেন। হঠাৎ করেই নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
প্রথম দিকে পপির এই অনুপস্থিতি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার আড়ালে থাকার রহস্য নিয়ে তৈরি হয় নানা জল্পনা। এরপর বেরিয়ে আসে পপির গোপন সংসারের খবর এবং সন্তানের জন্মের বিষয়টি। বর্তমানে তিনি বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং শোবিজের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
এদিকে, পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন নায়িকার বোন ফিরোজা পারভীন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করা হয়।
জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি, ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।
বিষয়টি নিয়ে পপির মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার মেয়েটা আগে ভালোই ছিল। কিন্তু বিয়ের পর ৫-৬ বছর ধরে স্বামীর প্ররোচনায় আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই পপির বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় সে নিজের নামে ৫ কাঠা জমি লিখিয়ে নিয়েছেন। ওই সময় নায়ক আলমগীর সাহেব বিষয়টি সুরাহা করে দেন। এখন পপি বাকি ৬ কাঠা জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের নানাভাবে হয়রানির মধ্যে রেখেছে। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব।
এদিকে অনেক দিন ধরে আড়ালবাস করছেন পপি। আড়াল থেকেই মুখ খুলেছিলেন। এবার এলেন ক্যামেরার সামনে। দীর্ঘ ৩ বছর পর সামনে এসে পপি বললেন, দেহটা ছাড়া কিছুই আমার ছিল না।
বৃহস্পতিবার (৬ ফ্রেব্রুয়ারি) পপির একটি ভিডিও প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে মা-ভাই-বোনের আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, আমি পপি। দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে— সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন পালন করেছি তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সেজন্যই বলেছি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সবসময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।
এরপর বলেন, দুদিন যাবত দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সবসময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা মিথ্যা অভিনয় নাটক মিথ্যা অভিযোগ বলার সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী আমাকে ভুলভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। আল্লাহ বলে কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না। এবার আসল কথায় আসি।
আজ যে অভিযোগগুলো আমার মা বোন করছে শক্তভাবে আমি প্রতিবাদ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাই বোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাইবোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ তো হয়ইনি হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে। এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতা নেই।
অভিনেত্রী যোগ করেন, কাদের নামে অভিযোগ করবে? অভিযোগ করে বাইরের মানুষের নাম। যেহেতু আমার ভাই বোন বাবা মাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি। আমি যে আয় করেছি তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সাথে বেইমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম। একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে। জানার পরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনিকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। আমার আপন মা ভাই বোন জড়িত ছিল।
তার কথায়, পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সবসময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁসছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনোই ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই। এখনও নেই।
আরও বলেন, একটা মানুষ যখন মেশিন নিয়ে পরিণত হয় তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবে থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা মা আমার সাথে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল। তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭-এর ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোন কিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরুব্বীরা মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কুলি’। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানী। সিনেমাটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে মাইলফলকএ করে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com