ডেস্ক রির্পোট:- মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করে এসব সংজ্ঞা বদলানো হবে। এ জন্য নতুন করে আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সংজ্ঞা বদলে গেলে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও বাদ পড়তে পারে।
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে যাঁরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী হিসেবে রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও এর আগে যাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছেন, তাঁদের সনদ বাতিল হয়ে যাবে। তাঁদের বিষয়ে নতুন করে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এখনো সেই সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘আমি নিজেও এ বিষয়ে চিন্তা করেছি। নিশ্চয়ই একটি ব্যবস্থা হবে, চিন্তাভাবনা আছে। খসড়াটি আগে চূড়ান্ত হোক, তারপর দেখা যাবে।’
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।
বর্তমান আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাঁহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী...।’ মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছিল সেসব দল, সংগঠন ও গোষ্ঠীর নাম সংশোধিত খসড়ায়ও ঠিক রাখা হয়েছে।
আগের সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ভারতে গিয়ে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যাঁরা বিদেশে থেকে যুদ্ধের ওপর জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত, মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক; স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া মেডিকেল দলের সব সদস্যকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ায় যাঁরা বিদেশে থেকে যুদ্ধের জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত; মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতর কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা থেকে তাঁরা বাদ পড়লে কয়েক হাজার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়বে।
আগের আইন অনুযায়ী পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দখলদার কর্তৃক নির্যাতিতা সব নারীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এর সঙ্গে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নির্যাতিতার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বয়সসীমা প্রযোজ্য ছিল না। তবে নতুন খসড়ায় বীরাঙ্গনাদের জন্য বয়সসীমার শর্ত প্রযোজ্য রাখা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।
জামুকার সুপারিশ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সংশোধিত পরিপত্র জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, জামুকা আইন সংশোধনের পর সর্বনিম্ন কত বছর বয়সে বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যাবে, তা সংশোধন করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা থেকেও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এই সংজ্ঞায় থাকা সংগঠন, দল ও গোষ্ঠীর নাম ঠিক রেখে সেখানে শুধু দালাল শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’আজকের পত্রিকা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com