ডেস্ক রির্পোট:-চট্টগ্রামে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী। সে হিসেবে ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয়ের সুযোগ–সুবিধা বাড়েনি। ক্যান্সার নির্ণয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পেট–সিটি (পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি) ল্যাব না থাকায় ক্যান্সার রোগীদের ঢাকায় দৌঁড়ঝাপ করতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য কোনো মলিকিউলার ল্যাবও নেই। চট্টগ্রামে ক্যান্সার নির্ণয়ের বিশেষায়িত ল্যাব না থাকায় কোন ধরনের ক্যান্সার রোগ হয়েছে– এটি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীদের ঢাকা কিংবা দেশের বাইরের নমুনা পাঠাতে হয়। এতে রোগীদের সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগ। এই বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়লেও ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা থেকে এখনো অনেকাংশে পিছিয়ে আছে।
চমেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বহির্বিভাগ মিলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার ৫৯৪ রোগী। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত রোগী ছিল ৫ হাজার ৬৫৮ জন। নতুন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ১৩৮ জন এবং মহিলা ছিল ২ হাজার ৫২০ জন। এছাড়া রেডিওথেরাপি নিয়েছেন ১ হাজার ৫১ জন। জরায়ু ক্যান্সারের ব্র্যাকিথেরাপি নিয়েছেন ২৩৮ জন। সিটি স্টিমুলেটর ১৬৫ জন এবং কেমোথেরাপি নিয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ জন।
অপরদিকে গত বছর বহির্বিভাগে স্তন ক্যান্সারের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬১৪ জন। জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৪১ জন। হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৯৭ জন। কোলারেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন ২০৯ জন। ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯৮ জন এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ৬৬১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে ক্যান্সার ওয়ার্ডে রোগীর বাড়ার সাথে সক্ষমতা অতীতের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে প্রতিদিন ওয়ার্ডে গড়ে ১৩০ জন রোগী রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন রোগী। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫ জন নারী জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্রেকিথেরাপি নিতে পারছেন। তবে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসার জন্য এখানে মলিকিউলার ল্যাব স্থাপন জরুরি। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ অ্যাভলেশন মেশিন, বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টার, অনকো ইমেজিং, ইন্টারভেনশনাল প্যাথলজিস্টও দরকার। বর্তমানে বিভাগে অনকো নার্স আছেন ১২ জন। এখন যে রোগীর চাপ অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন অনকো নার্স প্রয়োজন।
চমেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, খুসখুসে কাশি হওয়া, গলার স্বর বসে যাওয়া, খাওয়ার সময় খাবার আটকে গিলতে সমস্যা হওয়া, অস্বাভাবিকভাবে বুক জ্বালাপোড়া করা, শরীরের কোথাও চাকা চাকা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হওয়া (মেয়েদের নিয়মিত ঋতুস্রাব ছাড়া সব রক্তক্ষরণই অস্বাভাবিক)। এমন কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন ক্যান্সার আছে কিনা। তবে ক্যান্সার যদি প্রথম অবস্থায় শনাক্ত হয়, চিকিৎসা ভালোভাবে দেওয়া যায়। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় পুরুষরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে। মহিলারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সার, মুখ গহ্বর ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারে।
চমেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আমাদের চিকিৎসা সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। একসময় ক্যান্সারের চিকিৎসায় রোগীদের ঢাকার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এখন সেটি হচ্ছে না। এতে রোগীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের ওয়ার্ডে রোগীরা রাত ১২টা পর্যন্ত রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। এছাড়া কেমোথেরাপির সক্ষমতাও বেড়েছে। অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে একমাত্র আমাদেরই ব্রেকিথেরাপি মেশিন আছে। এতে করে জরায়ু চিকিৎসায় আক্রান্ত রোগীরা ভালো সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া চমেক হাসপাতালে নির্মাণাধীন ১৮০ শয্যার বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিটের কাজ শেষ হলে নতুন নতুন অনেক সরঞ্জাম যুক্ত হবে। একইসাথে রোগীদের আরো অত্যাধুনিক উপায়ে চিকিৎসা দিতে পারব।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস : আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে চমেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের উদ্যোগে সকালে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। আজাদী
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com