ডেস্ক রির্পোট:- আফ্রিকার বৃহত্তম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) বর্তমানে এক চরম নিরাপত্তাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমা এখন এম২৩ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে, যা সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে।
গত সপ্তাহে এম২৩ বিদ্রোহীরা দ্রুত অগ্রসর হয়ে প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যার শহর গোমা দখল করে নেয়। জাতিসংঘ ও কঙ্গোর সরকারি সূত্র মতে, এ সংঘাতে কমপক্ষে ৭০০ জন নিহত এবং প্রায় ৩,০০০ জন আহত হয়েছেন। এম২৩ বিদ্রোহীদের মূলত তুতসি জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা গঠন করেছে এবং তারা সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে লড়াই করছে বলে দাবি করছে। তবে কঙ্গো সরকার বলছে, রুয়ান্ডার মদদপুষ্ট এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী মূলত পূর্বাঞ্চলের বিশাল খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
গোমার বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। শহরের প্রধান চেকপোস্ট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখন সম্পূর্ণ বিদ্রোহীদের দখলে। হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের ঢল নেমেছে, যেখানে ডাক্তাররা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। আহতদের মধ্যে আছেন নাথানিয়েল সিরহো নামের এক চিকিৎসক, যিনি নিজেই বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন। তিনি জানান, তার বাড়ির পাশের একটি স্থানে বোমা পড়লে তিনি এবং তার প্রতিবেশীরা আহত হন। এ ছাড়া এক বৃদ্ধা নিজেই নিজের হাতে শরীর থেকে গুলি বের করেছেন, কারণ দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসা পাননি। পরিস্থিতি এতটাই সংকটময় যে হাসপাতালগুলোতে শয্যা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।
এম২৩ বিদ্রোহীদের শহরে উপস্থিতি যেন এক নতুন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি বাহিনীর কোনো সক্রিয় সদস্য শহরে দেখা যায়নি। কেবল পরিত্যক্ত সামরিক যান ও অস্ত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, লড়াইরত দলগুলো সংঘর্ষের অংশ হিসেবে যৌন সহিংসতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেক দোকানপাট বন্ধ, ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম স্থগিত, এবং ব্যবসায়ীরা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী স্যামি মাতাবিশি বলেন, ‘‘মানুষ ভীত… যারা এই অস্থিরতার কারণ, তারা এখনো শহরে আছে, তাই আমরা জানি না সামনে কী হতে চলেছে।’’
এম২৩ বিদ্রোহীদের এই সংঘাতময় পরিস্থিতি কেবল গোমাতে থামছে না; তারা দক্ষিণে বুকাভুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রাজধানী কিনশাসা পর্যন্ত যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও কঙ্গো সরকার বলছে, তারা যেকোনো মূল্যে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করবে, তবে বাস্তবতা হলো, গোমা এখনো এম২৩-এর দখলে। এটি কঙ্গোর রাজনৈতিক ও সামরিক ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আরও অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com