ডেস্ক রির্পোট:- টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা শবনম। তিন বছর বয়স থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সাবিহার। রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তার মা-বাবা। কিন্তু একটা সমাধান হলে নতুন সমস্যা শুরু হয়। একসময় ঘন ঘন প্রস্রাব করতে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে সাবিহার মা সাঈদা বেগমের।
উপজেলার এক চিকিৎসকের পরামর্শে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নিয়ে আসেন সাবিহাকে। সাঈদা বেগম বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সাবিহা। তখন তার বয়স ছয় বছর। সেই থেকেই চলছে তার চিকিৎসা। সাবিহার ডায়াবেটিসের মাত্রা ওঠানামা করে। দিনে কয়েকবার রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। নিয়ম করে চারবার ইনসুলিন নিতে হয়। এ ছাড়া অন্য ওষুধ তো আছেই। এই বয়সে ডায়াবেটিস শুনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। স্কুলে অন্য ছেলেমেয়েরা শোনার পর মেয়েকে নানাভাবে উত্যক্ত করত। পরে শিক্ষকদের সহায়তায় সেসব সমাধান হয়েছে। এখন চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়ে সুস্থ আছে।’
রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বোচ্চ ১৬ বছরের ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি। প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৫০০ করে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৭ হাজারের বেশি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ টাইপ-১ এবং ১৮ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিশ্বে ১ দশমিক ২ মিলিয়নের বেশি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আইডিএফের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিশু এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, বড়দের মতো শিশু-কিশোরদের মাঝেও টাইপ-২ ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা, যেসব শিশু-কিশোর মুটিয়ে গেছে, স্থূলতায় ভুগছে তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বংশগত জীনের সম্পৃক্ততা থাকলে, পরিবেশগত কারণে শিশুর ডায়াবেটিস হতে পারে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা ও ইনসুলিনের ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ানোর ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে চোখ, কিডনি, রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত জটিলতায় ভুগতে হয় রোগীকে। এজন্য নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি। যেহেতু এটি সারা জীবনের রোগ তাই নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, পরিমিত খাবার এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম জরুরি। সার্বিক বিষয় খেয়াল রাখার জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের বারবার প্রস্রাব লাগা, ওজন কমে যাওয়া, পিপাসা পাওয়া, খিদে পাওয়া, দুর্বল বোধ করা, কোনো কাজে মন না বসা; এই ছয়টি লক্ষণ থাকলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় শিশুর ডায়াবেটিস হয়েছে।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘যদি কোনো শিশুর বারবার পিপাসা ও মূত্রত্যাগ হয় এবং হঠাৎ ওজন কমে যায়, এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ। শিশুর এক বছর বয়সের পর যে কোনো সময়ই এটি ঘটতে পারে এবং এসব ক্ষেত্রে বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডায়াবেটিস নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রোগটি নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ হচ্ছে জীবনাযাপনের রীতি বদলে ফেলা। জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণে এনে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের পক্ষেও স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।’
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com