ডেস্ক রির্পোট:- বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যার কোনোটির ঠিকানা মিরপুর, কোনোটির বাড্ডা আবার কোনোটি রাজধানীর পুরান ঢাকায়। ধরন হিসেবে এগুলোকে কাপড়ের ব্যবসা, ওড়না, থ্রি-পিস ও শাড়ির পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসা বা ঠিকাদারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামে থাকলেও ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অস্তিত্ব না থাকা এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ৯৬টি হিসাবে প্রায় ৫৮২ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির (ডিইএ) এজেন্ট পরিচয়ে দেশটির এক নাগরিকের ২ লাখ ২২ হাজার ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোলাম সারওয়ার ও ওয়াহিদুজ্জামান নামে দুই বাংলাদেশির সংশ্লিষ্টতার তথ্য পায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। পরে তারা বিষয়টি বাংলাদেশকে জানালে অনুসন্ধানে নামে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। তারা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে এই চক্রের লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি বাংলাদেশি ও দুটি বিদেশি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পায়। পরে এসব হিসাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ৯৬টি হিসাবে ৫৮২ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য মেলে। আর যেসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাবগুলোর সন্ধান মিলেছে, তার সবগুলোর মালিক হিসেবে উঠে এসেছে ঢাকার তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও মা গোল্ড হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নাম।
অনুসন্ধানে মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নামে মা গোল্ড হাউস ছাড়াও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া গেলেও বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব স্থানে কখনো এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না বলে জানিয়েছেন ঠিকানাগুলোতে থাকা বর্তমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এমনকি মনীন্দ্রনাথ নামের কারও নাম তারা কখনো শোনেননি বলেও জানিয়েছেন।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ‘ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ’। এই প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে প্লট-১০, সড়ক নম্বর-৩, সেকশন-১১, মিরপুর ঢাকা। মিরপুর-১১ নম্বর বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত হলেও এখানে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্লক উল্লেখ নেই। ঠিকানাটি অসম্পূর্ণ। তবুও মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের প্রতিটি সড়কেই দুদিন ধরে ‘ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের সন্ধান করেও পাওয়া যায়নি। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে বি-ব্লকে ১১ নম্বর রোডের ৩ নম্বর লেনে ২০/এ হোল্ডিংয়ে ‘ভাই ভাই কফি হাউস অ্যান্ড বেকারি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে সেখানকার কেউ মনীন্দ্রনাথ নামের কাউকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। ‘ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব না মিললেও এই প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের একাধিক তপশিলি ব্যাংকের হিসাবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
এর মধ্যে ঢাকা ব্যাংকে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ইসলামপুর শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়, যার নম্বর–২১১১-০৯০০-০০৭৬৩। হিসাব খোলার কেওয়াইসিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন দেওয়া হয়েছে অন্যান্য। তবে ট্রেড লাইসেন্সে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন দেওয়া হয়েছে সরবরাহকারী। হিসাবটিতে মোট ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা ও একই সময়ে ১১ কোটি ২৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি টাকার ওপরে। একই প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়ান ব্যাংকের বংশাল শাখায় ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি ৫০ হাজার টাকা নগদ জমা দিয়ে একটি হিসাব খোলা হয়। এই হিসাবের কেওয়াইসিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন দেওয়া স্বর্ণ বা জুয়েলারি। তবে ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন দেওয়া সরবরাহকারী। এই হিসাবে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ ৯২ হাজার টাকা জমা হয়েছে। একই সময়ে ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে মোট লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। একই নামে এবি ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় আরও একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর। এই হিসাবের কেওয়াইসিতে ব্যবসার ধরন দেওয়া অন্যান্য। এই হিসাবটিতে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকা জমা করা হয়েছে। একই সময়ে ১১ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে মোট লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৬০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। একইভাবে নয়াবাজার শাখায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল এনআরবিসি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই হিসাবের কেওয়াইসিতে ব্যবসার ধরন দেওয়া হয়েছে কন্ট্রাক্টর। এই হিসাবে মোট ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা ও ১১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই হিসাবে মোট লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের মালিকানাধীন আই নক্স ফ্যাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১৬ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইউসিবিএলের ইসলামপুর শাখায় নগদ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে আই নক্স ফ্যাশনের নামে একটি হিসাব খোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ১১, ওয়াইজঘাট রোড, ঢাকা। তবে উক্ত ঠিকানায় এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, উল্লেখিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে টাকা জমাদানকারীদের মধ্যে আছেন এসএম সৌরভ করিম নামের এক ব্যক্তি। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ করিম এমএস ট্রেডিং নামের একটি মুদ্রা বিনিময় বা ফরেন একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত। তবে প্রতিষ্ঠানটির বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সরকারি অনুমোদন নেই। টাকা জমাদানের রসিদে দেওয়া এসএম সৌরভ করিমের ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া মনীন্দ্রনাথের আরও কয়েকটি হিসাবে এমএস ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ জমা দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউসিবিএল, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংকসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন তপশিলি ব্যাংকে মোট ৯৬টি ব্যাংক হিসাবে ৫৮২ কোটি ৭৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। এসব ব্যাংক হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ব্যাংকের হিসাবে অধিকাংশ লেনদেনই ‘ওয়াশআউট’ প্রকৃতির। হিসাবে সম্পাদিত প্রায় সব লেনদেনই পূর্ণ সংখ্যার বৃহদাঙ্কের। এরূপ লেনদেন স্বাভাবিক ব্যবসায়িক লেনদেন নয় বলেই মত সংশ্লিষ্টদের। আর ব্যাংকে জমা হওয়া অর্থ রাজিব সরদার ও মো. মইনুল নামের দুই ব্যক্তি তুলে নিয়ে যান।
বিস্তারিত জানতে কয়েকদিনের চেষ্টায় যোগাযোগ করা হয় রাজিব সরদার ও মো. মইনুলের সঙ্গে। দুজনই জানান, তারা মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের কর্মচারী ছিলেন, তবে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
রাজিব সরদার বলেন, ‘মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের মা গোল্ড হাউসে চাকরি করতাম। যে কারণে সে যা বলত, তা-ই শুনতে হতো। সে আমাকে চেক দিয়ে টাকা তুলে আনতে বলত, আমি তুলতাম।’
মনীন্দ্রনাথের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘ওনার মূলত গোল্ডের ব্যবসা। খোলাবাজার থেকে স্বর্ণ কিনত। এরপর তা বিক্রি করত। এ ছাড়া স্বর্ণের কারখানা (যেখানে স্বর্ণ গলানো হয়) থেকেও স্বর্ণ কিনত। এরপর তা বিক্রি করত।’
স্বর্ণের গ্রাহক সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা আমি জানি না। কারণ বিক্রির সময়ে সে আমাকে ছুটি দিয়ে পাঠিয়ে দিত। ওই সময় শুধু সে একা দোকানে থাকত।’
মো. মইনুল বলেন, ‘যখন চাকরি করতাম, তখন আমি আই নক্স ফ্যাশনের টাকা তুলেছি। করোনার আগে আমি চাকরি ছেড়েছি। তার আর কোনো কোম্পানির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ তবে আই নক্স ফ্যাশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আর আই নক্স ফ্যাশনের নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির পর, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেক্ষেত্রে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে কীভাবে চাকরি করলেন বা করোনার আগে কীভাবে তুললেন—জানতে চাইলে মইনুল বলেন, ‘তাহলে আমার কিছু বলার নেই।’
চাকরি না করলে আপনি আই নক্স ফ্যাশন ছাড়াও ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের অন্তত তিনটি হিসাব থেকে ২০২১, ২২ ও ২৩ সালে বিপুল পরিমাণে টাকা কীভাবে তুলেছেন—জানতে চাইলে মইনুল বলেন, ‘আমি তার (মনীন্দ্রনাথ) ওখানে চাকরি করার সময় তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক হয়। সে আমার বড় ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে এখনো আমার যোগাযোগ হয়। মাঝেমধ্যে তার ওখানে যেতাম, সে চেক দিলে টাকা তুলে দিতাম। মাসে হয়তো একবার যেতাম, কোনো মাসে যেতাম না।’
তার নামে নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে টাকা তোলার প্রমাণ রয়েছে জানালে মইনুল বলেন, ‘তাহলে সে আমার এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে নিজে তুলতে পারে।’
জানা যায়, বাংলাদেশে কাপড়ের ব্যবসা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসা। এ ধরনের ব্যবসায় সারা বছর উল্লেখযোগ্য বেচাকেনা না হলেও বিভিন্ন উৎসব ঘিরে বিপুল বেচাকেনা হয়। তবে মনীন্দ্রনাথের ‘ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘আই নক্স ফ্যাশনে’র নামে পরিচালিত হিসাবগুলোতে প্রতি মাসেই বিপুল অঙ্কের লেনদেন হয়েছে, যা স্বাভাবিক নয় বলে মনে করছে আর্থিক খাত নিয়ে কাজ করা একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
জানা গেছে, মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস মাত্র ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা আয়ের বিপরীতে আয়কর দিয়েছেন, যা তার ব্যাংক লেনদেনের তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নিয়ন্ত্রণাধীন হিসাবগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং ব্যবসার প্রতিনিধি, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহকারী, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস অপারেটরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা অর্থ জমা করেছেন, যা মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ব্যবসায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেক্ষেত্রে মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস কাপড়ের ব্যবসা, সরবরাহকারী ব্যবসা ও স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে প্রকৃতপক্ষে হুন্ডি কিংবা স্বর্ণ পাচার চক্রের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা গোয়েন্দা সংস্থার।
এদিকে মার্কিন নাগরিকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে যাদের নাম উঠে এসেছে, সেই গোলাম সারওয়ার ও ওয়াহিদুজ্জামানের নামে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য উঠে এসেছে বিএফআইইউর তদন্তে। এর মধ্যে নোহা এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ধরন এর নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে বিএফআইইউ। জামান এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে জমা দেওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি আমদানিকারক, তবে আমদানি নিবন্ধন সনদ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে আমদানি সংক্রান্ত লেনদেনও পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে মোবাইল এক্সেসরিজ, ফার্নিচার, কৃষি, হোটেল, স্টিল, সুপারশপ, আঠা, কাপড়ের ব্যবসায় লিপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিএফআইইউ, যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ ছাড়া মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ২ লাখ ২২ হাজার ডলার কোনো ব্যাংক হিসাবে ফরেন রেমিট্যান্স হিসেবে জমা হওয়ার দৃষ্টান্ত পায়নি বিএফআইইউ। সেক্ষেত্রে হাতিয়ে নেওয়া পুরো অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে না এনে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। মামলাটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), তবে তেমন অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে মামলার সদ্য সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিদেশি একজন নাগরিকের ২ লাখ ২০ হাজার (প্রকৃতপক্ষে ২২ হাজার) ডলার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে এই চক্রের সন্ধান মেলে। বিএফআইউ থেকে আমাদের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাদের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম, এই অর্থ বাংলাদেশের কোন হিসাবে বা কোন ব্যাংকে এসেছে সেই তথ্য থাকলে আমাদের দিতে। তাহলে আমাদের তদন্তে সুবিধা হবে। তবে তারা এখনো সেই চিঠির উত্তর দেয়নি।’ এর মধ্যেই তাকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. জোনাঈদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মামলাটি পেয়েছি মাত্র কিছুদিন হলো। আমি মামলাটি নিয়ে এখনো স্টাডি করছি। সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির বিষয়ে বলার মতো অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সব প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি আপনাকে কেন বলব? আপনি কে? এটা দেখার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে।’ এরপর আবার পরিচয় দিয়ে অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে মনীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আপনাকে আমি কেন বলব?’ পরে রাজিব সরদার ও মইনুলের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com