ডেস্ক রির্পোট:- বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির দুঃসময়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দলটির হাল ধরে রেখেছিলেন যারা, সেই ত্যাগী নেতারাই সরকার পরিবর্তনের পর এখন অবহেলার শিকার বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, কঠিন সময়ে যেসব নেতা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন, জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারাই এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে বিগত দিনে যারা আন্দোলনের মাঠে না থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন, অনেক অর্থ-কড়ির মালিক হয়েছেন, সেই ‘টাকাওয়ালা হাইব্রিড’ নেতারাই এখন দলে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাদের দাপটে দলীয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না ত্যাগী নেতারা।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে সদস্য হিসেবে জায়গা পেয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এম এ হান্নান, সৈয়দ সিহাব উদ্দিন আলম ও মোহাম্মদ ইউছুপ। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এদের বেশিরভাগই বিগত সরকারের সময়ে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি, মিছিল-মিটিংয়ে কম আসতেন। তাদের নামে নেই কোনো মামলাও। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য শামসুল আলম, হাজী মোহাম্মদ আলী, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব আলম, মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী শোলক বহর ওয়ার্ডের আশরাফ চৌধুরী বাদ পড়েছেন এই কমিটি থেকে।
ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের বিগত আহ্বায়ক কমিটির বাইরে থেকে ২৩ জন যুক্ত হয়েছেন নতুন কমিটিতে। তারা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাজা, যুগ্ম আহ্বায়ক (প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সিহাব উদ্দিন মোবিন, সদস্য এম এ হান্নান, মুজিবুল হক, মো. মহসিন, খোরশেদ আলম, সালাউদ্দিন, সৈয়দ সিহাব উদ্দিন আলম, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মশিউল আলম স্বপন, মোশারফ হোসেন ঢেপটী, জাফর আহমদ, একে খান, গাজি আইয়ুব, মাহবুব রানা, এম এ সবুর, নুরুদ্দিন হোসেন নুরু, হানিফ সওদাগর, সরফরাজ কাদের রাসেল, মোহাম্মদ আজম, ইসমাইল বালি, আশরাফুল ইসলাম ও মো. ইউসুফ।
নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মান্নান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে ৩০টির বেশি মামলা হয়েছে। কতবার জেল খেটেছি তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু দুঃখ লাগে যখন দেখি ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। টাকাওয়ালা হাইব্রিড নেতারাই এখন পাইপলাইনে থাকা নেতাদের আশার আলো। তাদের এখন এরা ব্যবহার করছেন। আমরা যারা ত্যাগী নেতা ছিলাম বিএনপির, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও কোণঠাসা ছিলাম, এখনো হতাশায় আছি। বিএনপি নেতাদের অফিস ও বাসাবাড়িতে এখন হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারী নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়।’
একই কথা বলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দীন আহমেদও। তিনি জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন মামলা-হামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তারা এখন অসহায়। হাইব্রিড নেতাদের চাপে তাদের অনেকেই এখন দলীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসাবাড়ি এড়িয়ে চলছেন। অহেতুক মিথ্যা অভিযোগে বহিষ্কার আতঙ্ক নিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন অনেকে।
চট্টগ্রাম নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সেকান্দর জানান, সংগঠন থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে, যার জন্য তারা দলীয় কর্মসূচির বাইরে কোথাও যান না। কিছু নেতা যারা বিগত দিনে দলের দুঃসময়ে কোথাও ছিলেন না, তারা এখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘১৫ বছর ধরে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। জেলও খেটেছি। এখনো রাজপথে রয়েছি। এখন বৈষম্যের শিকার হয়ে বিএনপির ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। তারা সবাই হতাশ।’
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগের দল পুনর্গঠন কমিটির দলনেতা অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে রাজি হননি।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com